স্বপ্নের নগরে পালাবদল আজ
শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪৯

স্বপ্নের নগরে পালাবদল আজ

মো. ফয়ছল আলম

প্রকাশিত: ০৭/১১/২০২৩ ১২:০০:০৭

স্বপ্নের নগরে পালাবদল আজ


আধ্যাত্মিক রাজধানী খ্যাত সিলেট নানা দিক থেকেই অবহেলিত, বঞ্চিত ছিলো এবং এখনও আছে। তবে একের পর এক উদ্যোগ আর প্রচেষ্টার ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি সিলেট মাত্র কয়েক বছরে ঘুরে দাড়িয়েছে। সরকার পরিবর্তন হলেও বাস্তবে সিলেটের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থামেনি। আর এসব কিছুর কৃতিত্ব আমাদের সিলেটের রাজনৈতিক নেতৃত্বের। দলীয় মতপার্থক্য থাকলেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সিলেটকে এগিয়ে নিচ্ছেন তারা।

যার ফলে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার, বিনিয়োগ, পর্যটনসহ সকল ক্ষেত্রে আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে সিলেট। আর এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই দেশের সবচেয়ে আধুনিক অগ্রসর এবং স্মার্ট নগরে রূপ নেবে আমাদের প্রাণের সিলেট। ১০ লক্ষ নগরবাসীর সিলেট হয়ে উঠেছে এতদ অঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার মুল আকর্ষণ।

সিলেট সিটির নতুন মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণকালে এ নগরবাসীর প্রত্যাশার মাত্রায় নতুন নতুন পালক যুক্ত হবে- এমন প্রত্যাশাতেই দিন গুণছেন দেড়কোটি সিলেট অঞ্চল বাসী। আর স্বপ্নের এই নগরে মেয়র পদে পালাবদল হচ্ছে আজ ৭ নভেম্বর।

টানা দুইবার মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অপরাজিতভাবেই দায়িত্ব হস্তান্তর করছেন আজ মঙ্গলবার(৭ নভেম্বর)। নব নির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জান চৌধুরীর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন বিকেল তিনটায়।

এ উপলক্ষে নগর ভবণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দাওয়াত দেয়া হয়েছে সাংবাদিক ও সূধী সমাজকে। বিশাল সামিয়ানা টানানো হয়েছে। সেখানে হবে অনুষ্ঠান। সিসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিমা ইয়াসমিন এ অনুষ্ঠানে সকলের উপস্থিতি কামনা করেছেন। 

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ওয়েব সাইট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট (জেলা শহর) ২৭টি ওয়ার্ড ও ২১০টি মহল্লা নিয়ে গঠিত। ঔপনিবেশিক আমলেই সিলেট দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। সিলেট পৌরসভার সৃষ্টি ১৮৭৮ সালে। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন এক মারাত্মক ভূমিকম্প গোটা শহরটিকে প্রায় সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করে ফেলে। পরবর্তীতে ধ্বংস্তুপের ওপর গড়ে উঠে ইউরোপীয় ধাঁচের আরও সুন্দর ও আধুনিক শহর। ১৮৯০ এর দশকের শেষ ভাগে বেশ কিছু রাস্তাঘাট তৈরি করা হয়। ১৯১২-১৫ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের একটি শাখা সিলেটের সাথে সংযুক্ত হলে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সিলেটের বিচ্ছিন্নতার প্রকৃত অবসান ঘটে। চা শিল্পের কারণে বিশ শতকের প্রথম দিকে সিলেট শহরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৫০ ও ১৯৬০ দশকে প্রবাসী সিলেটিদের এবং সিলেট শহর দ্রুত নগরায়ণ ঘটতে থাকে। সিলেট পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয় ২০০২ সালের ২৮ জুলাই । সে সময় সিলেট নগরীর আয়তন ছিল ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার। 

সর্বশেষ ২০১৮ সালে ২৭টি ওয়ার্ডে সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কিছু মৌজা অন্তর্ভুক্ত করে সিটি কর্পোরেশন সম্প্রসারিত করা হয়। এখন ওয়ার্ড বেড়ে ৪২টি এবং আয়তন সাড়ে ৭৯ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। আসাম টাইপের অসংখ্য বাংলো বাড়ী’র এই শহরে এখন ইটপাথরে গড়ে উঠেছে প্রায় ৫০ হাজার বহুতল ভবন। পাখির চোখে তাকালে মনে হয় সিলেট এখন বিশ্বের কোনো উন্নত শহরেরই অংশ।সিলেট নগর প্রতিষ্ঠার পর থেকে একের পর এক উন্নয়নে যোগ হতে থাকে নানা রকমের পালক।

সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান তার দায়িত্বের সময়েই সিলেট নগরের উন্নয়নের সুচনা করেন। পৌরসভাকে নগরে রূপ দিতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করেন মরহুম এই মেয়র। সিলেট নগরের মাটি ও মানুষের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তোলা ‘জনতার কামরান’ খ্যাত সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ২০২০ সালের ১৫ জুন ইন্তেকাল করেন। তিনি মেয়র থাকাকালেই আরিফুল হক চৌধুরী সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের সহযোগিতায় আত্মনিয়োগ করেন। নগর উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করেন। উন্নয়নে সাইফুর রহমান, কামরান আরিফ একে অপরের সহযোগি হয়ে উঠেন। তাদের প্রচেষ্টায় সিলেটে ব্যাপক উন্নয়ন হয়। 

যার ফলে ২০১৫ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি মেয়র হবার পর সিলেট নগরের উন্নয়নে ঘটে একের পর এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

বর্তমান সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুুল মাল আব্দুল মুহিত এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের উদার সহযোগিতা উন্নয়নের ধারায় নতুন গতি সঞ্চার হয়।

সর্বশেষ সিলেট নগরের উন্নযনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১২’শ কোটি টাকার বরাদ্দ ভাগ্য খুলে দেয় সিলেট নগরের মানুষের। সিলেট নগরের সকল বৃহৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে নতুন গতি পান আরিফুল হক চৌধুরী। যার ফলে ২৭টি ওয়ার্ডেই ব্যাপক উন্নয়ন হয়।

বিশেষ করে সিলেট নগরের জিন্দাবাজারের সবকটি সড়ক প্রসস্তকরণ, একাধিক ওয়াকওয়ে নির্মাণ, বিদ্যুতের ভূগর্ভস্থ লাইন স্থাপন করে তারের জঞ্জাল অপসারণ, ফূটপাত নির্মাণ, ছড়া উদ্ধার, ট্রাক টার্মিনাল স্থাপন, বিভিন্ন পয়েন্টে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণ, বড় সব স্থাপনায় গেইট নির্মাণ, কদমতলীস্থ দৃষ্টিনন্দন বাস টার্মিনাল, পারাইরচকে ট্রাক টামিনাল, সিসিকের নিজস্ব গ্যারেজ এবং এ্যাসফল্ট প্লান্ট স্থাপন, একাধিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ক্লিনিক প্রতিষ্টা হয়েছে আরিফূল হক চৌধূরীর সময়েই। আর এসব কারণে মেয়র আরিফূল হক চৌধুরী যেমন প্রশংসিত হয়েছেন তেমনি হকার উচ্ছেদসহ নানা ঘটনায় বিভিন্ন সময় বিপত্তিতেও পড়েছেন। সব কিছু ছাপিয়ে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে সিলেট নগরী এখন এক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। চকচকে এক নান্দনিক নগর এখন সিলেট।

সিলেট নগরকে ঘিরে এখন স্বপ্নের ডাল পালা মেলছে। শুধু সরকারীভাবে নয়, বেসরকারীভাবেও সিলেটে বিভিন্ন প্রতিষ্টান গড়ে উঠায় দেশ বিদেশের অনেকেই এখন সিলেটমুখি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। ফাইভ স্টার সহ একাধিক মান সম্পন্ন হোটেল-মোটেল, রেস্তোরা, রিসোর্ট, ক্যাটারিং হাউস, বিনোদনকেন্দ্র, ৭টির মতো বিশ্ববিদ্যালয়, ৩টি মেডিকেল কলেজ, সরকারী বেসরকারী হাসপাতাল, হাইটেক পার্ক, বানিজ্যিক কেন্দ্র, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল, বিমানবন্দর সহ নানা সুবিধা থাকায় সিলেট দিন দিন উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সোপানে ধাপে ধাপে এগোচ্ছে। সর্বোপরি বিভাগীয় সদর দপ্তর এখানে হওয়ায় এই নগরে মানুষের বসবাস, ব্যবসা বাণিজ্য এবং চলাচল বাড়ছে। নগরবিদরা বিভিন্ন সময়ে সিলেটকে নিয়ে প্রত্যাশার বাণী শুনিয়েছেন। তাদের আশা আগামীর  বাংলাদেশে সিলেট হবে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার নতুন মডেল। তথ্য প্রযুক্তি এবং বিশ্বায়নের যুগে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এক অগ্রসর জনপদ। যার মুল স্তম্ভ হবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। আর এর সফল কান্ডারী হবেন নতুন মেয়র আনোয়রুজ্জামান চৌধুরী ও তার নেতৃত্বাধীন পরিষদ। এটিই এখন এতদ অঞ্চলের মানুষের একান্ত প্রত্যাশা। 

JA