
সিলেট বিমানবন্দর
সোমবার (১৩ নভেম্বর) সিলেট থেকে লন্ডনগামী ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার আড়াই ঘণ্টার মধ্যে বিমানের একজন যাত্রী অসুস্থ হয়ে মারা যান। কিন্তু এরপরও বিমানটি জরুরী অবতরণ করেনি এবং আরও নয় ঘন্টা যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে।
পাইলট-ইন-কমান্ড ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ বলেন, "যাত্রীকে মৃত বলে ধরে নেওয়ার পর, বিমান কর্মকর্তারা তার মরদেহটি আসন থেকে নামিয়ে একটি খালি সারিতে শুইয়ে দেয়।" ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের ১১ ঘণ্টা ৩৭মিনিট পর বিমানটি হিথ্রো পৌঁছায়।
অথচ প্রোটোকল অনুসারে, যে মুহূর্তে একজন যাত্রীর মেডিকেল জরুরী অবস্থা হয়, বিমানটিকে একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করে এসওএস পাঠাতে হবে এবং সম্ভাব্য নিকটতম বিমানবন্দরে অবতরণের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
বিমানের সূত্র অনুসারে, সমস্ত বিমানবন্দরগুলো জরুরী চিকিৎসা দেয়ার জন্য প্রস্তুত সেইসাথে, নিকটতম হাসপাতালগুলিকে সতর্ক করা থাকে। সেইসাথে অ্যাম্বুলেন্স এবং প্যারামেডিকদের স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়।
পাইলট কাছের বিমানবন্দরে কেন অবতরণ করেননি জানতে চাইলে পাইলট বলেন, "আমার উদ্দেশ্য ছিল তাকে বাঁচানো, জানাজা করা নয়। তিনি আগেই মারা গিয়েছেন"
তাকে মৃত ঘোষণা করার জন্য বোর্ডে কোনও ডাক্তার ছিল না, পাইলট বলেন। এক্ষেত্রে তিনি ফ্লাইট কর্মকর্তা বা ফ্লাইট পার্সারের তথ্যের ওপরেই নির্ভর করেছেন।ফ্লাইট পার্সার কোন প্রশিক্ষিত মেডিকেল পেশাদার নয়। তাকে শুধুমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম বলেন, ‘ভদ্রলোক যখন সুস্থই ছিলেন। তবে যখন তিনি বললেন আমার একটু খারাপ লাগছে। তখন কিন্তু আমরা ফ্লাইটে ডাক্তার পেয়েছি এবং তাঁরা চিকিৎসার জন্য সে সময় যা যা করা দরকার সেগুলো করেছে। তাঁকে অক্সিজেনও দেওয়া হয়েছিল। আমাদের কেবিন ক্রু, পাইলটসহ সবাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল।
নিয়ম অনুযায়ী, ফ্লাইটের কোনো যাত্রীর মেডিকেল জরুরি অবস্থা দেখা দিলে তখন উড়োজাহাজ থেকে মেডিকেল জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সংকেত পাঠাতে হয় এবং সবচেয়ে নিকটতম বিমানবন্দরে অবতরণের জন্য প্রস্তুত হতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় বিমানবন্দরের নিকটতম হাসপাতালগুলোকে সতর্ক রাখা হয় এবং অ্যাম্বুলেন্স ও প্যারামেডিকদের বিমানবন্দরে প্রস্তুত রাখা হয়। যদিও বিমানের ওই ফ্লাইটটি জরুরি অবতরণের কোনো প্রস্তুতি নেয়নি।
এ প্রসঙ্গে শফিউল আজিম বলেন, ‘চিকিৎসার একপর্যায়ে ওই যাত্রী ভালো বোধ করছিলেন। সে সময় মূল গন্তব্যে পৌঁছতে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মতো ছিল। আমাদের আশা ছিল, গন্তব্যে নেমেই তাঁকে হাসপাতালে নিতে পারব। কিন্তু তাঁর আগেই তিনি মারা যান। যখন তিনি মারা যান তখন আমাদের নামার কোনো সুযোগ ছিল না। কারণ, একবার যদি নামতে হয়, সেটার অনুমতিসহ অন্যান্য বিষয়গুলো আরও আগে থেকেই শুরু করতে হয়।’
ফ্লাইট লগ অনুসারে, আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় ওই যাত্রীকে মৃত বলে ধরে নেওয়ার পর পার্সার তাঁর লাশটি নিয়ে একটি খালি সিটের সারিতে শুইয়ে দেন। পরে মৃত যাত্রী নিয়েই ফ্লাইটটি লন্ডনে অবতরণ করে। হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ফ্লাইটটি অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব নেয় এবং সংশ্লিষ্ট সবার সাক্ষাৎকার নেয়। এসব কারণে হিথ্রো বিমানবন্দরে ফ্লাইটটি থেকে যাত্রী নামানোর আগে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেতে তাঁদের আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল। যাত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য লাশটি নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
JA
