
জৈন্তাপুরে আমন চাষীদের মুখে সোনালী হাসি।
জৈন্তাপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমন আবাদের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবার আশাবাদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। গত সপ্তাহ থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ধানক্ষেতে ব্যাস্ত সময় পার করছে কৃষকেরা।
এ বছর বড় বন্যা ও অতিরিক্ত পাহাড়ি ঢল না হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমন ধানের ফলন নিয়ে কৃষকদের মাঝে সন্তুষ্টি দেখা যায়।
গত সপ্তাহে উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে কম্বাইন হারভেষ্টারের মাধ্যমে শস্য কর্তনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ ছাড়াও কৃষক পর্যায়ে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে পুরো দমে।
এ বছর উপজেলায় তিন ধরণের আমন ধান চাষ করা হয়েছিলো। এর মধ্যে আমন হাইব্রিড, উচ্চ ফলনশীল আমন ও স্হানীয় পর্যায়ে আমন চাষ করা হয়।
মোট চাষকৃত জমির পরিমান ১১ হাজার ১ শত ৯৫ হেক্টর। যার মধ্যে হাইব্রিড ২৫ হেক্টর, উফশি ৮৮৯০ হেক্টর এবং স্হানীয় পর্যায়ে ২২৮০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়।
চাষকৃত আমন হাইব্রিড ধানের মধ্যে ব্রি হাইব্রিড -০৬ জাতের ধান রয়েছে পুরো ২৫ হেক্টর জুড়ে। এছাড়াও উচ্চ ফলনশীল আমনের মধ্য যে জাত গুলো চাষাবাদ করা হয় সেগুলো হলো বিআর ১০,১১,২২,২৩ ও ব্রি ধান ৩২,৩৪,৩৯,৪১,৪৬,৪৯,৫১,৫২,৫৬,৬২,৭১,৭২,৭৫,৮০,৮৭ ও বিনা ৭,১১,১৭,২২ জাতের ধান।
এছাড়াও স্হানীয় ভাবে কৃষকেরা ময়নাশাইল,লতিশাইল,নাজরাশাইল,রন্জিত,বিরইন,কালিজিরা ও গোঠক প্রজাতির ধান আবাদ করেছিলেন।
চলতি ধান কাটা মৌসুমের শুরুতে এখন পর্যন্ত ৮৯৫ হেক্টর জমির ধান কাটা সম্পন্ন করা হয়েছে। যা পুরো উপজেলায় মোট চাষের ৮ শতাংশ সেই সাথে ফলন পাওয়া গেছে ২৫৫০ মেট্রিকটন।
লক্ষমাত্রা অনুযায়ী চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি ২.৮৫ মেট্রিকটন চালের হিসেবে উফশি, ৩.১০ মেট্রিকটন হাইব্রিড ও ১.৫০ মেট্রিকটন স্হানীয় পর্যায় থেকে চাল উৎপাদন আশা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
চলতি মৌসুমে কৃষক পর্যায়ে মোট ৬০টি প্রদর্শনী দেয়া সহ প্রতি ইউনিয়নে দুইজন ও নিজপাট ও দরবস্ত ইউনিয়নে তিনজন করে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক আমন ফসলের তদারকি করেছেন। সেই সাথে কৃষক পর্যায়ে গত মৌসুমে ভর্তুকি মুল্যে ২৫টি পাওয়ার থ্রেশার ( মাড়াই যন্ত্র) বিতরণ করা হয়েছিলো যা চলতি আমন ফসল উত্তোলনের কাজে ব্যাবহারিত হচ্ছে।
উপজেলার ৩ নং চারিকাঠা ইউনিয়নের পশ্চিম রামপ্রাসাদ গ্রামের আমন চাষি আবদুল হান্নানের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, চলতি মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় ১ বিঘা জমিতে ব্রি ধান ৭৫ এর বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। তিনি জানান এ বছর মোট বিশ বিঘা জমিতে তিনি আমন চাষ করেছেন।
এ ছাড়াও দরবস্ত ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের খড়িকাপুন্জি গ্রামের কৃষক আব্বাস উদ্দিন জানান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় ১ বিঘা জমিতে ব্রিধান -৫২ এর বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী দেয়া হয়েছিলো। তিনি মোট ৩৫ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। তিনি বিঘা প্রতি ১৮ থেকে ২০ মণ ফলন পাওয়ার আশাবাদী।
জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, চলতি অগ্রহায়ণ মাসে পুরো দেশের ন্যায় জৈন্তাপুর উপজেলায় আমন ধান কাটার মৌসুমে ব্যাস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। মৌসুমের শুরুতে উচ্চ ফলনশীল ব্রিধান ৩৪,৩৯,৪৯ ও ব্রিধান ৭৫,৮০,৮৭ ও বিনা -৭ জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উফশী ফসল বাকি জাতের ধানের পাশাপাশি স্হানীয় পর্যায়ে চাষকৃত আমন ও হাইব্রিড ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে।
তিনি আরো জানান আমন মৌসুম শেষে আসন্ন ২৩/২৪ সালের ইরি বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে কাজ শুরু করেছে জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। আসন্ন মৌসুমে পুরো উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৩ শত ৭৫ হেক্টর জমিতে। ইতিমধ্য উপজেলার কৃষক পর্যায়ে হাইব্রিড প্রজাতির ধানের বীজ জনপ্রতি ২ কেজি করে দেয়া শুরু হয়েছে। তিনি বলেন আসন্ন ইরি বোরো মৌসুমে উপজেলার ২ হাজার ৮ শত জন কৃষককে হাইব্রিড ও ১ হাজার ৮ শত জন কৃষকের মাঝে উচ্চ ফলনশীল বোরো ধানের বীজ সরবরাহ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে যারা ধানের বীজ পেয়েছেন তারা হাওড় এলাকায় বীজতলা তৈরীর কাজ শুরু করেছেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
JA
