
ছবি: নিজস্ব
বন্যাক্রান্ত ওসমানীনগর উপজেলার ৩নং পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের আফিজ মিয়া জানেন না এখন তার ঠাঁই কোথায় হবে।প্রথম ধাপের বন্যায় তার বসত ঘরে গলা সমান পানি হয়েছিল ২য় ধাপের বন্যায় ইতিমধ্যে তার বসতঘর পুরো ধসে পড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে তিনি দিশাহারা। তিনি তার দীর্ঘ জীবনে অনেক বন্যা-দুর্যোগ দেখেছেন। এবারের বন্যার দীর্ঘস্থায়িত্ব অতীতের সব ভোগান্তিকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় ১৫ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে অসহায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
শুধু আফিজ মিয়াই নয়, এ রকম অভিজ্ঞতা এখন উপজেলার লক্ষ মানুষের। গত ঈদের পরদিন থেকে ওসমানীনগরে বন্যা শুরু হয়। ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট ডুবে যায়। ১৫ দিন পর পানি কমতে শুরু করলেও ১লা জুলাই থেকে ফের অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে আবার ওসমানীনগরে ভাঙ্গা কুশিয়ারা ডাইক দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করছে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাড়ছে পানি। এ নিয়ে দুর্ভোগে আছে উপজেলাবাসী। এই পানি সরে যেতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লেগে যাবে বলে মনে করছে এলাকাবাসী। দীর্ঘস্থায়ী এই বন্যা স্থানীয় মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। তারা মনে করে, যুগ যুগ ধরে চলে আসা পানি নিষ্কাশনের প্রাকৃতিক ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় বন্যা প্রলম্বিত হয়েছে। দিনের পর দিন কেউ গৃহহারা, আবার কেউ নিজ ঘরেই পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন কাটাচ্ছে। কৃষি নির্ভর পরিবারগুলোর বেহাল অবস্থা। গো-খাদ্যের সংকটে গবাদি পশু নিয়ে তারা পড়েছে দুশ্চিন্তায়। সবুজ ঘাষ পাওয়া এখন স্বপ্ন, হালচাষের গরু বাঁচাতে না পারলে শুষ্ক মৌসুমে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে জমিচাষ।
ঈশাগ্রাই গ্রামের কৃষক খালিদ মিয়া বলেন, ‘পানি কমার কোনো পথ আছেনি। হকলতা তো ভরি গেছে। আগর-গাং আর নাই। কতোটা দিন অইছে বেকার আছি। কাজ-কাম খেত-খামার কুনতা নাই। খানি না পাইলে গরু বাঁচবো কেমনে। এদিকে, ওসমানীনগরে অসংখ্য জলমহাল ও কয়েকশ’ খাল প্রায় সবক’টিই ভরাট হয়ে হারিয়ে ফেলেছে আগের নাব্য। এ কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢল আর বৃষ্টির পানির প্রবাহ বিঘ্নিত হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নিচু জমি ভরাট করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না রেখে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট নির্মাণ।
ওসমানীনগরে এমনও অনেক খাল-বিল আছে, যেগুলো বই-পুস্তকে পাওয়া যাবে কিন্তু বাস্তবে এর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। এক শ্রেণির মানুষ নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে দখলের মহোৎসব করেছে সরকারি জলাশয়গুলোতে।
অন্যদিকে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের পাশের খালগুলোতে বর্জ্য ফেলে বাজার এলাকার পানি প্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।৩নং পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়ন এলাকায় রত চাপে বিলীন প্রায়। ওসমানীনগরে এবারের বন্যায় ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় খোলা আছে ১৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র। সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যেগে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে।
জৈন্তা বার্তা / টিটু
