পায়ে গু লি নিয়ে কাতরাচ্ছেন গোলাপগঞ্জের মাসুক
শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৩

ছাত্র-জনতার আন্দোলন

পায়ে গু লি নিয়ে কাতরাচ্ছেন গোলাপগঞ্জের মাসুক

মো. বদরুল আলম, গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮/০৯/২০২৪ ০১:৪২:০৮

পায়ে গু লি নিয়ে কাতরাচ্ছেন গোলাপগঞ্জের মাসুক

ছবি নিজস্ব


সিলেটের গোলাপগঞ্জের ২৪ বয়সী যুবক মাসুক মিয়া। পেশায় তিনি ছিলেন একজন স্ন্যাকবার ব্যবসায়ী। প্রতিদিন সকাল হলেই ছুটে যেতেন নিজ দোকানে। যা আয় হতো তাই দিয়ে টেনেটুনে চলতো অভাবের সংসার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এখন পায়ে গুলি নিয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা না হওয়ায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মাসুকের দিন কাটছে কষ্টে। এখন নিজের অজানা ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভেবে অঝোরে কাঁদছেন অসহায় মাসুক।

গোলাপগঞ্জ উপজেলার দাড়িপাতনে খান মঞ্জিলে ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এখনো তার পায়ের ভেতরে একাধিক স্পিন্টার রয়েছে। ব্যথা আর তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে হাঁটা-চলা করতে পারছেন না মাসুক মিয়া। অন্যের কাঁধে ভর করে হাঁটাহাঁটির চেষ্টা করেন।

দাড়িপাতনের ১নং রোডে থাকা স্ন্যাকবার দোকান দিয়ে সংসার চলতো মাসুকের। এখন তিনি অন্যদের সহায়তার জন্য তাকিয়ে আছেন।

যা কিছু সম্ভল ছিল, সব নিজের চিকিৎসাবাবদ তা ব্যয় করেছেন।

জানা যায়, গত ৪ আগস্ট বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গোলাপগঞ্জের চৌমুহনীতে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলে। ছাত্র-জনতাকে দমাতে পুলিশ গুলি ছোড়ার পাশাপাশি ছররা গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। 

দুপুর ২টা থেকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে সেদিন ৬ জন নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন অসংখ্য ছাত্র-জনতা। বিকেল ৪টার দিকে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার সামনে আন্দোলনকারীদের দমিয়ে রাখতে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল। এই গুলিতে ঘটনাস্থলেই পরিবহন চালক গৌছ উদ্দিন ও ব্যবসায়ী মিনহাজ আহমদ নিহত হন। এসময় অসংখ্য আন্দোলনকারী আহত হন। এর মধ্যে আন্দোলনে থাকা মাসুক মিয়ার পায়ে শটগানের অন্তত ১টি বুলেট ও ৪০০টি স্পিন্টার বিঁধেছিল। গুলি বের করা গেলেও এখনও অনেক স্পিন্টার রয়ে গেছে তার পায়ে।

ঘটনার সময় তাৎক্ষণিক মাসুককে উপস্থিত ছাত্র-জনতা সিলেটের ইবনে সিনা হাসপাতালে প্রেরণ করলে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। সেখানে চিকিৎসা গ্রহণের পর বর্তমানে তিনি বাড়িতে রয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পর বিছানায় শুয়ে দিন কাটছে মাসুক মিয়ার। তার পরিবারে একমাত্র মা ও খালা রয়েছেন।

গুলিবিদ্ধ মাসুক মিয়া বলেন, আমি আন্দোলনে গুলি খেয়েছি সেজন্য আমার দুঃখ নেই। দেশ তো আবার নতুন করে স্বাধীনতা পেয়েছে। তবে আমি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলাম। আমি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে দোকান বন্ধ। আমি খুব কষ্টে মাকে নিয়ে আছি। আমি নতুন সরকার ও প্রবাসীদের কাছে সাহায্য চাই।

তিনি বলেন, অপারেশন করে বুলেটটি বের করা হলেও কিছু গুলি পায়ের ভেতরে রয়ে গেছে। দিনভর পা ব্যথা করে, হাঁটতে পারি না। কবে আবার সুস্থ হয়ে দোকানে যেতে পারবো এই চিন্তা সারাক্ষণ মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ওষুধপত্রের অনেক খরচ রয়েছে। সেজন্য আমি বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাই।

জৈন্তা বার্তা / আরআর