কুলাউড়ায় চেয়ারম্যানের বি রু দ্ধে রোহিঙ্গাকে জন্ম সনদ দেওয়ার অভিযোগ
শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১১

কুলাউড়ায় চেয়ারম্যানের বি রু দ্ধে রোহিঙ্গাকে জন্ম সনদ দেওয়ার অভিযোগ

মহি উদ্দিন, কুলাউড়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০১/১০/২০২৪ ০৯:৫২:৫৩

কুলাউড়ায় চেয়ারম্যানের বি রু দ্ধে রোহিঙ্গাকে জন্ম সনদ দেওয়ার অভিযোগ

ছবি: নিজস্ব


মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের জন্ম সনদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বখ্শ এমন কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুর আহমদ চৌধুরী বুলবুল। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সাবেক উদ্যোক্তা বিরজিত দেবনাথের ওপর দোষ চাপিয়েছেন চেয়ারম্যান ওয়াদুদ। 

৫ আগষ্টের পর শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর আত্মগোপনে চলে যান হাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বখ্শ। তার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য নুর আহমদ চৌধুরী বুলবুল। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর অবৈধভাবে জন্ম সনদ দেওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।

নুর আহমদ চৌধুরী বুলবুল বলেন  আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর জানতে পারি  চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বখশ বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে জন্ম সনদ প্রদান করেছেন। জন্ম নিবন্ধন রেজিস্টার খাতায় এসবের প্রমাণও খুঁজে পাই।

এ বছরের প্রথম দিকে দুজন সন্দেহজনক ব্যক্তির নাম রেজিস্টারভুক্ত করা হয়। তাদের একজন হলেন কক্সবাজারের উখিয়া থানার পাতাবাড়ি হোল্ডিং নম্বর ২৫-এর সৌমিক বড়ুয়া, পিতার নাম সন্তোষ বড়ুয়া, মাতার নাম মনজু বড়ুয়া। রেজিস্টার অনুসারে তার জন্ম নিবন্ধন নং ২০০৮৫৮১৬৫৩৫৫০৪৬৬০৬, জন্ম তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০০৮, জন্মনিবন্ধন রেজিস্ট্রেশন এবং ইস্যুর তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০২৪। অন্যজন হলেন টেকনাফ উপজেলার হৃীলা ইউনিয়নের ফৌজিয়া লাল মোহাম্মদ। তার পিতার নাম লাল মোহাম্মদ ও মাতার নাম হাজেরা খানম। রেজিস্টার অনুসারে তার জন্ম নিবন্ধন নং ১৯৮৮৫৮১৬৫৩৫০৪৭২৯৩, জন্ম তারিখ ১০ জুলাই ১৯৮৮ এবং ইস্যুর তারিখ ৪ মার্চ ২০২৪।

অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৯ জুন সাবেক উদ্যোক্তা বিরজিত দেবনাথের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে অব্যাহতির জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বখ্শ। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ডিএফ মোহাম্মদ শাহ আলম অভিযোগটি তদন্ত করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবের স্বাক্ষর স্ক্যান করা এবং জন্মনিবন্ধন সনদে ইউপি সচিবের ইংরেজি স্বাক্ষর জাল করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘদিন ধরে হাজীপুর ইউনিয়নের উদ্যোক্তা বিরজিত দেবনাথের বিরুদ্ধে অসততা, অসৌজন্যমূলক আচরণ ও অতিরিক্ত টাকা দাবি বা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।

এ ঘটনায় ওই বছরের ৮ আগস্ট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপপরিচালক মল্লিকা দে উদ্যোক্তা বিরজিতের অব্যাহতির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি পত্র দেন। সেখানে অভিযুক্ত ও বিতর্কিত উদ্যোক্তা বিরজিতকে বাদ দিয়ে তার কাছ থেকে সরকারি সম্পত্তি (হার্ডডিস্কসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী) উদ্ধার করে নতুন উদ্যোক্তা নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

এ বিষয়ে বিরজিত দেবনাথ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার পূর্ববিরোধ থাকায় তিনি এসব অভিযোগ তুলেছেন। জন্ম সনদ সার্ভারে রেজিস্টার করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ কিছু করতে পারবে না।’

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুর আহমদ চৌধুরী বুলবুল জানান, জন্ম নিবন্ধন রেজিস্টার খুঁজলে অন্তত অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা ও ভারতীয় নাগরিকের অবৈধ রেজিস্ট্রেশনের প্রমাণ পাওয়া যাবে। অবৈধভাবে জন্ম সনদ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান। এখন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে পরে অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে দেবেন।

অভিযোগের বিষয়ে হাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বখ্শ বলেন, ‘অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ইউনিয়নের সাবেক উদ্যোক্তা বিরজিত দেবনাথ কারসাজি করে আমার ও সচিবের স্বাক্ষর স্ক্যান করে আমাকে ফাঁসানোর জন্য ওই জন্মসনদ তৈরি করেছে। ২০২২ সালে জন্ম সনদ কারসাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসন তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফোনে বিষয়টি অবহিত করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

জৈন্তাবার্তা / মনোয়ার