বিয়ানীবাজারে কৃষিতে গ্রিনহাউস পদ্ধতি : সুফল পাচ্ছেন কৃষক
শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৫

বিয়ানীবাজারে কৃষিতে গ্রিনহাউস পদ্ধতি : সুফল পাচ্ছেন কৃষক

শহিদুল ইসলাম সাজু, বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০২/১০/২০২৪ ১২:৫১:৪৬

বিয়ানীবাজারে কৃষিতে গ্রিনহাউস পদ্ধতি : সুফল পাচ্ছেন কৃষক

ছবি: বিয়ানীবাজারে গ্রিনহাউস পদ্ধতিতে সবজি ও চারা উৎপাদন করতে তৈরী ‘পলিনেট হাউস’


সিলেটের বিয়ানীবাজারে প্রথমবারের মতো পলিনেট হাউস (গ্রিনহাউস) পদ্ধতিতে সবজি ও চারা উৎপাদন শুরু হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ভারী বৃষ্টিপাত, তাপ, কীটপতঙ্গ ও ভাইরাসজনিত রোগের মতো প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে নিরাপদে শাকসবজি, ফলমূলসহ কৃষি উৎপাদন সম্ভব। আর তাই মাত্র ১০ শতক জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে স্থানীয় কৃষি বিভাগ একটি প্রকল্পের মাধ্যমে মুন্না আহমদ নামে এক কৃষককে বেছে নেয়া হয়েছে। যাতে পলিনেট হাউসের সুফলতা আসলে স্থানীয় কৃষকরা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য এরকম হাউসের মাধ্যমে সবজি উৎপাদনে উৎসাহী হন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে সার ও কীটনাশক ছাড়াই সব ধরনের শাকসবজি, ফল রোপণ ও চারা উৎপাদন করা সম্ভব। পলিনেটের ওপরে শেড দিয়ে কৃত্রিম উপায়ে তাপ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এখানে উৎপাদিত চারা ২০ দিন পর রোপণযোগ্য হয়। মূলত অতিবৃষ্টি ও অকাল বন্যায় চারা রাখতে না পারায় বিকল্প এই ব্যবস্থা। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পলিনেট হাউসে উচ্চমূল্যের ফসল যেমন টমেটো, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, রকমেলন, রঙিন তরমুজ, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুসসহ এসব সবজির পাশাপাশি চারা উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হবে। এর ফলে সবজি চাষে যেমন বৈচিত্র্য আসবে, তেমনি অনেকেরই আয়ের নতুন উৎস হবে। পলিথিনের আচ্ছাদন থাকায় এতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ভেতরে প্রবেশে বাধা পায় এবং অতিবৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ফসল অক্ষত থাকে। অসময়ে সবজি চাষের জন্য পলিনেট হাউস দেশে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নতুন সংযোজন। এর মাধ্যমে শীতকালীন সবজিগুলো যেমন সহজেই গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যায়, তেমনি গ্রীষ্মকালের সবজিও শীতে উৎপাদন করা যায়। এ প্রযুক্তি বাংলাদেশের কৃষিতে কয়েক বছর পূর্বে সংযোজন হলেও আমেরিকা, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনসহ অনেক দেশে পলিনেট হাউজের মাধ্যমে সবজি ও ফলমূল আবাদ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। বিয়ানীবাজার উপজেলায় প্রথমবারের মতো এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও চারা রোপণ শুরু হয়েছে। প্রতিটি পলিনেট হাউস নির্মাণে প্রায় ১৪-১৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছে কৃষি বিভাগ।

নিজের মালিকানাধীন জমি না থাকলেও ওই প্রকল্পের জমিটি প্রকৃত মালিক পক্ষের কাছ থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাওয়ায় কৃষক মুন্না আহমদ পলিনেট হাউস পদ্ধতির মাধ্যমে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। বিভিন্ন সবজির চারা উৎপাদনে তিনি ছাড়াও প্রতিদিন দুজন শ্রমিক পলিনেট হাউসে কাজ করছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে প্রকল্পের অন্য আরেকটি পাশে সবজি আবাদ করার কথা জানান এ প্রান্তিক চাষী।

সরেজমিনে ওই প্রকল্পে গিয়ে জানা গেছে, প্রায় দুই মাস পূর্বে বিয়ানীবাজার পৌরসভার মিনি বাস টার্মিনালের পাশে এ পলিনেট হাউসটি করা হয়েছে। কৃষি অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কৃষক মুন্না আহমদ চারা উৎপাদনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদ করেছেন। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন সবজির কয়েকশত উন্নত চারা তিনি বিক্রি করছেন।

মুন্না আহমদ জানান, পলিনেট হাউসটি ১০ শতক জায়গার উপর থাকলেও তিনি পাশেই আরও প্রায় পাঁচ বিঘা জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ফলের চারাসহ নানা রকমের সবজির আবাদ শুরু করেছেন। মৌসুম শেষে এ প্রকল্প থেকে তিনি আর্থিকভাবেও লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।

বিয়ানীবাজার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা লোকমান হেকিম বলেন, পলিনেট হাউস প্রযুক্তির মাধ্যমে শীতকালীন সবজি গ্রীষ্মকালে এবং গ্রীষ্মকালীন সবজি শীতকালে আবাদ করা যায়। ভেতর ও বাইরের তাপমাত্রার যেমন পার্থক্য রয়েছে তেমনি সবজির জন্য ক্ষতিকর কীট পতঙ্গ ও পোকামাকড় পলিনেট হাউসে ঢুকতে পারবে না। ফলে ভাল ও উন্নত মানের চারা এখানে উৎপাদন করা যায় বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।

লোকমান হেকিম আরও বলেন, ব্যয়বহুল পলিনেট হাউস ছাড়াও বিভিন্ন প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষক মুন্না আহমদকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আমরা আশা করছি, তিনি পলিনেট হাউস পদ্ধতির সুফল পাবেন।

জৈন্তাবার্তা / রহমান