জৈন্তাপুরে দা*দন ব্যবসার কারণে স*র্বহারা হচ্ছেন অনেকে
শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:০৩

জৈন্তাপুরে দা*দন ব্যবসার কারণে স*র্বহারা হচ্ছেন অনেকে

সাইফুল ইসলাম বাবু, জৈন্তাপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৪/০১/২০২৫ ১০:৫৫:১৮

জৈন্তাপুরে দা*দন ব্যবসার কারণে স*র্বহারা হচ্ছেন অনেকে

প্রতীকী ছবি


জৈন্তাপুর উপজেলার ৬নং চিকনাগুল ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত উমনপুরে এক দাদন ব্যবসায়ী খপ্পরে পড়ে সর্বহারা হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

দাদন ব্যবসায়ীর মামলায় বাড়িছাড়া বেশ কয়েকটি পরিবার। ওই দাদন ব্যবসায়ীর খপ্পর থেকে রক্ষা পেতে আদালতে অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগী। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর মুদির দোকান পরিচালনার জন্য টাকার প্রয়োজন হয়। সেই ব্যবসায়ী হলেন শিকারখাঁ গ্রামের মনফর আলীর ছেলে মো. তজম্মুল আলী (৩২)। তিনি তখন সিদ্ধান্ত নেন ব্যাংক থেকে ঋণ নেবেন। বিষয়টি জানতে পেরে দাদন ব্যবসায়ী তজম্মুল হোসেইন ওরফে টিয়া হাজী পূর্বপরিচিত হওয়ায় তজম্মুল আলীর বাবা মনফর আলীর মাধ্যমে তাকে আশ্বাস দেন এই বলে যে ব্যাংক ঋণ গ্রহণের কোনো দরকার নেই, যত টাকার প্রয়োজন তা ঋণ হিসেবে দেবেন তজম্মুল হোসেইন।

এই কথার প্রেক্ষিতে তজম্মুল হোসেইন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে ও বাদীর পিতার অগ্রণী ব্যাংক গ্যাস ফিল্ড শাখার হিসাব নং ০২০০০০৩২০১৭৬৬ এর বøাংক চেকের পাতায় (নং- ১১৯২৩০৮৯৩১১) স্বাক্ষর নিয়ে ৩ লক্ষ টাকা ঋণ প্রদান করেন। পরবর্তীতে চতুর দাদন ব্যবসায়ী তজম্মুল হোসেইন কৌশল অবলম্বন করে ৩ লক্ষ টাকার বিপরীতে ৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আদায় করে বøাংক চেক ও জুডিসিয়াল বøাংক স্ট্যাম্প ফেরত না দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে পাঠানো লিগ্যাল নোটিশে জানান যে, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তজম্মুল আলী ৯ লক্ষ টাকা ও তার পিতা মনফর আলী ৬ লক্ষ টাকা পরিশোধ করতে হবে। বাদী তজম্মুল আলী অভিযোগে উল্লেখ করেন, এভাবে জুডিসিয়াল বøাংক স্ট্যাম্প ও বøাংক চেকের মাধ্যমে ঋণের টাকা দিয়ে এলাকার বহু মানুষকে সর্বহারা করেছেন দাদন ব্যবসায়ী তজম্মুল হোসেইন ওরফে টিয়া হাজী। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানকালে আরেক ভুক্তভোগী মিনতি রায় জানান, তজম্মুল হোসেইনের নিকট থেকে তিনি ১ লক্ষ টাকা ঋণ নেন। পরবর্তীতে ১ লক্ষ টাকা পরিশোধও করেন। কিন্তু এখন তার বিরুদ্ধে ৭ লক্ষ টাকার লিগ্যাল নোটিশ এসেছে। সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের কর্মচারী বশির আহমদ জানান, পরিচিত এক ব্যক্তি তাকে জিম্মাদার রেখে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেন। পরে জিম্মাদার বশির আহমদ মান-সম্মানের ভয়ে হাউজ বিল্ডিং লোন নিয়ে ৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু জিম্মাদারসহ তার নিকটাত্মীয়ের বিরুদ্ধে ২৫ লক্ষ টাকার লিগ্যাল নোটিশ এসেছে। আরেক ভুক্তভোগী কাপনা কান্দি গ্রামের আলিম উদ্দিন জানান, তিনি ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন এবং ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। এরপরও তিনি ১৫ লক্ষ টাকার লিগ্যাল নোটিশ পেয়েছেন। সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের কর্মচারী মো. আয়াত উল্লাহ জানান, তিনি ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। পরবর্তীতে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। এরপর তিনি ৫ লক্ষ টাকার লিগ্যাল নোটিশ পেয়েছেন। রাজু আলী নামে একজন জানান, ২০ হাজার টাকা ধার নিয়ে তিনি ১৬ হাজার টাকা পরিশোধ করেন।

পরবর্তীতে মাত্র ৪ হাজার টাকা বকেয়া থাকায় তিনি ৫ লক্ষ টাকার লিগ্যাল নোটিশ পেয়েছেন। ভুক্তভোগীরা তদন্তপূর্বক দাদন ব্যবসায়ী তজম্মুল হোসেইন ওরফে টিয়া হাজীর সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে দাদন ব্যবসার হাতে থেকে জনসাধারণকে রক্ষার দাবি জানান। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তজম্মুল হোসেইন উরফে টিয়া হাজী দাবি করেন, তিনি জমি কেনাবেচার ব্যবসা করেন। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো শতভাগ মিথ্যা। তিনি বলেন, আমি সুদের ব্যবসা করি না, কোর্টে কোনো প্রমাণ পাবেন না। ইসমাইল আলী আশিক নামে এক ব্যবসায়ী আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। সেই মামলায় আমাকে সুদখোর প্রমাণ করতে না পারায় কিছুদিন আগে মামলা থেকে মুক্ত হয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরা এভাবে আমার কাছ থেকে টাকা নেয়। আমার লিগ্যাল নোটিশ আছে, আমার টাকা নেবেন, ৫০ শতাংশ লাভ দেবেন- এই চুক্তিতে। এভাবে আমার কাছ থেকে অনেকেই টাকা নেন। তিনি বলেন, আমি লিগ্যাল নোটিশ ইস্যু করেছি ১ মাসের সময় দিয়ে। এর মধ্যে আপস না করলে আইনগত প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আর আমার নির্যাতনে কোনো মানুষ ঘরছাড়া হয়নি। এগুলো মিথ্যা রটানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান জানান, ভুক্তভোগী মো. তজমুল আলী আদালতের মাধ্যমে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। আদালত অভিযোগটি তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা অভিযোগটির ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করব।

জৈন্তাবার্তা / সুলতানা