জৈন্তাপুরে মৃৎশিল্পীদের অন্যরকম নববর্ষের আনন্দ
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫৯

জৈন্তাপুরে মৃৎশিল্পীদের অন্যরকম নববর্ষের আনন্দ

সাইফুল ইসলাম বাবু, জৈন্তাপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫/০৪/২০২৫ ০৩:০৩:০৪

জৈন্তাপুরে মৃৎশিল্পীদের অন্যরকম নববর্ষের আনন্দ

ছবি নিজস্ব


চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্য গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন কুমারপাড়া এলাকায় মাটির তৈরি তৈজসপত্র কিংবা খেলনাসামগ্রীর চাহিদা কমে যাচ্ছে দিন দিন। তার ওপর সুলভ মূল্যে বাজার দখল করা প্লাস্টিক খেলনাসামগ্রী সহজলভ্যতায় দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে মাটির তৈরি খেলনাসামগ্রী কিংবা তৈজসপত্র। যেখানে নিম্ন-মধ্যবিত্তদের ঘরোয়াভাবে টাকা-পয়সা জমানোর একমাত্র অবলম্বন ছিল মাটির তৈরি ব্যাংক, সেটাও সম্প্রতি দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকের তৈরি রকমারি ডিজাইনের ব্যাংক। বর্তমান সময়ে মাটির তৈরি পণ্যসামগ্রী বা খেলনা উপকরণ প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে। দিনের পর দিন মাটির তৈরি খেলনাসামগ্রীর চাহিদা কমে যাওয়ায় মৃৎশিল্পীরা দিন দিন এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। 

তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের দিনে জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেখা মিলল ভিন্ন এক চিত্র। এদিন জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ঐতিহাসিক বটতলায় আয়োজন করা হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ও লোকজ মেলা। মেলার একপ্রান্তে বসানো হয় বিভিন্ন প্রকার হস্তশিল্প ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বাহারী পণ্যের স্টল। আর উপজেলা কর্মসংস্থান ব্যাংক কার্যালয়ের সন্নিকটে রাস্তার পাশে বসে মৃৎশিল্পীর হাতে বানানো মাটির তৈরি খেলনাসামগ্রীর অস্থায়ী দোকান।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে মাটির তৈরি খেলনার দোকানগুলোর দিকে বেশি ছিল ক্রেতাদের আগ্রহ। এদিন উপজেলার সারিঘাট কুমারপাড়া এলাকার চারজন মৃৎশিল্পী তাদের বাহারী পণ্যের পসরা নিয়ে বসেন। যার মধ্যে ছিল বাহারী রঙের হাতি, গরু, ঘোড়া, মহিষ, নৌকা, হাঁড়ি, পাতিল, চুলা, মাটির ব্যাংকের মতো পণ্যসামগ্রী। আগ্রহী ক্রেতারা পণ্যসামগ্রী কিনতে এসে পরিবারের সাথে বাহারি রঙের খেলনার সাথে একটি ছবি তুলতে কোনো ভুল করেননি। তুলনামূলক কম দাম হওয়ায় মেলায় আগত শিশুদের জন্য থলে ভর্তি করে খেলনাসামগ্রী কিনতে দেখা গেছে অভিভাবকদের।

সারিঘাট কুমার পাড়া এলাকার মৃৎশিল্পী কারিগর সুজন কুমার জানান, মাটির তৈরি পণ্যের চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে। পুরো বছর হাঁড়ি, পাতিল, দইয়ের পাতিল এগুলো সামান্য পরিমাণে বিক্রি হয়।

তিনি জানান, বৈশাখী মেলায় এসে মোটামুটি সবগুলো খেলনাসামগ্রী তিনি বিক্রি করতে পেরেছেন। 

উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার আজিজুল হক খোকন বলেন, ছোটবেলায় বাড়ির পাশের মেলা বসলে এ রকম মাটির তৈরি খেলনাসামগ্রীর প্রতি বেশি টান থাকতো। এখনকার সময়ে আমাদের শিশুদের এই খেলনাসামগ্রী সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তাই আজ বৈশাখী মেলার সুযোগে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এসে মাটির তৈরি খেলনাসামগ্রী কিনে দিয়েছি। বাহারি রঙের এই খেলনাসামগ্রী পেয়ে তারা বেজায় খুশি। 

এদিকে, চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্য মৃৎশিল্পকে সংরক্ষণের জন্য ও মৃৎশিল্পীদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার আওতায় এনে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন জৈন্তাপুর উপজেলার সুশীল সমাজ।

জৈন্তা বার্তা/আরআর