সোনাই নদী দখল করে বাঁ ধ নির্মাণ করে অবাধে চলছে চাঁদাবাজি
রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ০৫:০১

সোনাই নদী দখল করে বাঁ ধ নির্মাণ করে অবাধে চলছে চাঁদাবাজি

ফারুক আহমেদ, কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮/০৪/২০২৫ ১১:০৯:২৩

সোনাই নদী দখল করে বাঁ ধ নির্মাণ করে অবাধে চলছে চাঁদাবাজি

ছবি : সংগৃহীত


সুনামগঞ্জের ছাতক ও সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তঘেঁষা খরস্রোতা নদী সোনাই। দুই উপজেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা এই নদীতে বাঁধ দিয়ে চাঁদাবাজি করছে একটি চক্র। দীর্ঘদিন ধরে এই অপকর্ম চলছে। চক্রটি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস করে না কেউ। নির্বিঘ্নে চাঁদাবাজি করতে পুলিশকে দেওয়া হয় মাসোহারা। 

জানা গেছে, সোনাই নদীর ছনবাড়ী-গাংপার নোয়াকোট পয়েন্টে দেওয়া এই বাঁধের ওপর দিয়ে চলে পাথরবাহী ট্রাক ও ট্রাক্টর। ছাতকের ইছামতী নদী থেকে পাথরভর্তি ট্রাক বাঁধের ওপর দিয়ে যায় কোম্পানীগঞ্জ। প্রতিবার প্রতি ট্রাক থেকে তোলা হয় তিন’শ টাকা করে চাঁদা। আর বাঁধে ট্রাক্টর রেখে নদীতে থাকা বালুভর্তি নৌকা থেকে ট্রাক্টরে লোড করা হয় বালু। প্রতি ট্রিপ বালুর জন্য ট্রাক্টর থেকে তোলা হয় তিন হাজার টাকা করে চাঁদা। 

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  ছাতকের ইসলামপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মখলিছুর রহমান, তার বড় ভাই বিএনপি নেতা দাবিদার আব্দুল কুদ্দুস, ছোট ভাই রফিক আহমদ ও জামায়াত নেতা ইলিয়াছুর রহমানসহ কতিপয় দুর্বৃত্ত মিলে এই বাঁধটি নির্মাণ করেছেন। এরা একই পরিবারের সদস্য এবং সবাই ডাকাতি, খুন ও চোরাচালানসহ একাধিক মামলার আসামি। 

জানা গেছে, নদীতে এই চক্রের দেওয়া বাঁধের ওপর দিয়ে প্রতিদিন অন্তত চারশো' ট্রাক ও ট্রাক্টর বালু-পাথর পরিবহন করে। ফলে এখান থেকে প্রতিদিন তিন লক্ষাধিক টাকার চাঁদাবাজি হয়। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মখলিছুর রহমান জানান, এতোদিন এখানে ব্রীজ না থাকায় এলসির পাথর পরিবহনের সুবিধার কথা ভেবেই তাঁরা মাটি ও পাথর ফেলে বাঁধটি নির্মাণ করেছিলেন। কয়েক বছর আগে যখন এই বাঁধ তৈরি হয়, তখন কোনো ব্রীজ ছিলো না। বর্তমানে একটি ব্রীজ হলেও গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হয়নি। এলসি ব্যবসায়ী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ-প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্মতি নিয়েই বাঁধটি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। 

চাঁদাবাজির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে কোনো প্রকার চাঁদাবাজি হয় না। বরং গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বাঁধের মেরামতের প্রয়োজনে টাকা তোলা হয়। তবে নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ রাখায় কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারেননি। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, মাটির বাঁধটির অদূরেই একটি নতুন ব্রিজ হয়েছে। চাঁদাবাজ চক্রের চাঁদাবাজি টিকিয়ে রাখতে ব্রীজটি খুলে দেওয়া হচ্ছে না। 

এদিকে, সোনাই নদীর এই বাঁধের বিরূপ প্রভাব পড়ছে নদীতীরবর্তী জনপদে। ২০২২ এর ভয়াবহ বন্যা ও ২০২৩ এর আকস্মিক বন্যায় কোম্পানীগঞ্জ ও ছাতকের অসংখ্য বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট ভেঙেছে। স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বন্যার পানি সরাসরি আঘাত হেনেছে তীরবর্তী এলাকায়। কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। প্রতি বছর নদীভাঙনের কবলে পড়েন রতনপুর, নিজগাঁও, গাংপার নোয়াকোট, বাহাদুরপুর, বৈশাকান্দি, বনগাঁও, ছনবাড়ী ও তৎপার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকজন।

গাংপার নোয়াকোটের ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান সান্ডুল বলেন, এই বাঁধের ফলে ২০২৩ এর বন্যায় বনগাঁও, শাহ আরেফিন, বাগানবাড়ি, রতনপুর, ধনীটিলা ও পুরান নোয়াকোট রাস্তা ভেঙেছে। ধনী টিলায় একটি কালভার্ট ভেঙেছে। এখনও এগুলো মেরামত করা যায়নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ময়না মিয়া বলেন, আমরা বহুবার স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি।  

ছাতক থানার ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন, বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ বন্ধ করার এখতিয়ার কারও নেই। তিনি নতুন এসেছেন। এখনও ওই এলাকায় যাওয়া হয়নি। তবে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।

কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আবুল হাসনাত বলেন, কোনোভাবেই নদীতে মাটির বাঁধ দেওয়া উচিত না। এটা অন্যায়। তিনি ছাতকের এসিল্যান্ডের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।

জৈন্তাবার্তা / রহমান


শীর্ষ সংবাদ: