সিলেটে ফার্মের দুর্গন্ধে পাঠদান ব্যাহত, তদন্তে পরিবেশ অধিদপ্তর
রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ০৫:২৬

সিলেটে ফার্মের দুর্গন্ধে পাঠদান ব্যাহত, তদন্তে পরিবেশ অধিদপ্তর

মো. আফজালুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সদর

প্রকাশিত: ০৩/০৫/২০২৫ ০২:০৩:২১

সিলেটে ফার্মের দুর্গন্ধে পাঠদান ব্যাহত, তদন্তে পরিবেশ অধিদপ্তর


সিলেটে রহিমা ফরিদ কিন্ডারগার্টেন কর্তৃক পরিবেশ অধিদপ্তরে দাখিলকৃত একটি দরখাস্তের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এম আর এগ্রো ফার্ম নামের প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের এক সদস্য।

তদন্তকালে হাজী আব্দুছ ছামাদ মেমোরিয়্যাল একাডেমির প্রধান শিক্ষক ও রহিমা ফরিদ কিন্ডারগার্টেনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর বক্তব্য গ্রহণ করেন তিনি। এসময় হাজী আব্দুস ছামাদ মেমোরিয়াল একাডেমির পক্ষ থেকে আরও একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়। অভিযুক্ত ফার্ম থেকে নির্গত দুর্গন্ধে কেবল শিক্ষার্থীরাই নয়, তদন্ত কর্মকর্তা নিজেও বিব্রতবোধ করেন।

জানা যায়, সিলেট সদর উপজেলার মহালদিক গ্রামের মাঝ বরাবর তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও একটি মসজিদ রয়েছে। চারপাশে রয়েছে অসংখ্য ঘর-বাড়ি। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে বৃক্ষ উৎপাদনকে সামনে রেখে গড়ে ওঠে এম আর এগ্রো ফার্ম। এতে আশার আলো দেখেন এলাকাবাসী। অথচ সেই আশার আলো আজ হতাশায় পরিণত হয়েছে।

প্রতিবেশীরা জানান, আধুনিক বৃক্ষ উৎপাদন আজ শুধু নিয়ম রক্ষার সাক্ষী। অথচ গড়ে উঠেছে দশ হাজারের অধিক ক্ষমতাসীন ফার্মের নির্মিত শেড। তা যখন পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে তখন কিছু কিছু সময় তাপমাত্রাটাও বেড়ে যায়। নির্গত দুর্গন্ধ এতটাই অসহনীয় হয় যে সুগন্ধি জ্বালিয়েও নিস্তার পাওয়া যায় না। এরই প্রেক্ষিতে এক এক করে অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে ফার্মটির বিরুদ্ধে।

তদন্তকালীন সময়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন মহালদিক গ্রামের মো. আব্দুল কাদির, মো. খুরশিদ আলম, বেলায়েত হোসেন, আব্দুল হান্নান, আব্দুল মছব্বির, ধাপনাটিলা গ্রামের আব্দুল হামিদ, মুড়ারগাঁও গ্রামের আরব আলী, আজমল আলী, আইনজীবী সহকারী আলাল মিয়া এবং উভয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীবৃন্দসহ এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা, আইনজীবী সহকারী আলাল আহমদ বলেন, ফার্মের নির্গত দুর্গন্ধ আমাদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে। পাশেই স্কুলের পাশাপাশি গ্রামের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। মসজিদে আসর, মাগরিব, এশার সময় অতিরিক্ত দুর্গন্ধের কারণে নামাজটাও ঠিকমতো আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা এর একটা প্রতিকার চাই।

রহিমা ফরিদ কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সভাপতি আব্দুল আহাদ বলেন, আগে এতটা দুর্গন্ধ ছিল না। কিন্তু ইদানীং বৃষ্টির কারণে দুর্গন্ধ অসহনীয় হয়ে পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমরা এর প্রতিকার চাই।

হাজী আব্দুস ছামাদ মেমোরিয়াল একাডেমির প্রধান শিক্ষক মো. ফখর উদ্দিন বলেন, মুহিবুর রহমানের মালিকানাধীন এগ্রো ফার্মটি প্রথমে নার্সারি দিয়ে শুরু হয়। এতে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু রমজান ও ঈদের ছুটির পর বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হলে দেখা যায় ফার্মের নির্গত দুর্গন্ধ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। তখন আমরা একাধিকবার ফার্মের সাথে যোগাযোগ করি। প্রথমদিকে আমাদের আশ্বস্ত করেলেও পরে আর তারা ফোন ধরেননি। বাস্তবতা হলো, আমরা কোনো সুরাহা পাইনি। তাই পরিবেশসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের শরণাপন্ন হয়েছি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তদন্ত দলের প্রধান আবু সুফিয়ান বলেন, সরেজমিন তদন্তে দেখা গেছে ফার্মের নির্গত দুর্গন্ধের বিষয়টি সঠিক। আমরা ফার্মটিও পরিদর্শন করেছি। উপস্থিত সময়ে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাইনি। সম্পূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে কর্তৃপক্ষকে পরবর্তী কার্যদিবস রোববার আমাদের কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলেছি। 

এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুর্গন্ধযুক্ত ফার্মটি অপসারণের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক।

জৈন্তা বার্তা/আরআর


শীর্ষ সংবাদ: