নেতৃত্বের প্রভাব নাকি প্রভাবিত নেতৃত্ব?
শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৯

নেতৃত্বের প্রভাব নাকি প্রভাবিত নেতৃত্ব?

কলাম লেখক

প্রকাশিত: ০৯/১২/২০২৩ ০৯:৫৮:১৮

নেতৃত্বের প্রভাব নাকি প্রভাবিত নেতৃত্ব?


নেতৃত্ব হচ্ছে বিশেষ কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য অন্যদেরকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাজকে কিংবা তাদের আচরণকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে নিয়ে আসার ক্ষমতাকেই নেতৃত্ব বলা হয়।

মানুষ তার কর্মে ছোট হয়ে গেলে, সেখানে কার কি করার থাকে? আমি কখনোই কাউকে ব্যক্তিগত ভাবে হেয় করার জন্য লেখালেখি করি না। নিজ চোখে দেখা ব্যতিক্রম গুলো নিয়েই চেষ্টা করি কথা বলতে। আমি বিশ্বাস করি সমাজে একটি ভালো কাজ হলে সেটার সুফল ভোগ করবো আর মন্দ কিছু হলে সেটাও আমাকে ভোগ করতে হবে।

একজন জনপ্রতিনিধি এলাকায় আসবেন, এই উপলক্ষে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছেন, কেউ তার মাথার উপর ছাতা ধরেছেন, কেউ হাঁটছেন আর হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন। তিনি রিকশায় উঠে বসার আগে কেউ একজন এগিয়ে গিয়ে রিকশার গদিটা মুছে দিচ্ছেন। রিকশা থেকে নেমে অনুষ্ঠানের প্যান্ডেলে প্রবেশ করেছেন, কেউ দৌড়াচ্ছেন প্লেট নিয়ে, কেউ দৌড়াচ্ছেন পানির গ্লাস ধুয়ে দিতে, কেউ তাড়াহুড়ো করছেন টিস্যু পেপার এনে দিতে। নেতা খাওয়া-দাওয়া শেষ করে একটু রিলাক্স হবেন, সেই সময়টাতে কেউ জিজ্ঞেস করছেন কোলড্রিংস খাবেন? কেউ বলছে আর একটু দই এনে দেই?? এমন ভাবে নেতা খেয়েদেয়ে খুশি মনে চলে গেলেন, আর তার কর্মীরা তৃপ্তি সহকারে ঘরে ফিরে গেলেন।

উপরে উল্লেখিত আপ্যায়নের পদ্ধতি গুলো আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অংশ, আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য হচ্ছে সম্মানী ব্যক্তিকে সম্মান দেওয়া ও যথাসাধ্য আপ্যায়ন করা।

কিন্তু নেতা চলে যাওয়ার পর যারা আদর আপ্যায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেন, তারাই নেতার ব্যাপারে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করা শুরু করে দিলেন!! এই সংস্কৃতিটা আসলে কোথা থেকে এসেছে জানা নেই। অথচ নেতা আর সেসব কর্মীরা যেন একে অপরের পরিপূরক!

*একটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে নেতাদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সহ বিভিন্ন বৈধ অবৈধ সুবিধা নেওয়া বা নিতে চাওয়া অধিকাংশ মানুষ হয় নেতাকে সন্তুষ্ট রাখতে অথবা বাধ্য হয়ে সেসব আদর-আপ্যায়নে প্রতিযোগিতা করে, যা স্বাভাবিক ভাবে দেখলে দৃষ্টিকটু মনে হবে এবং এভাবে কাজ করা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়।

এখন কথা হচ্ছে, সেই সমস্ত মানুষের দ্বারা সব সময় আবৃত থাকা নেতার পক্ষে এই বলয়ের বাইরে গিয়ে কাজ করা অথবা সমাজের সুস্থ চিন্তার ও ইতিবাচক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষের সাথে পরামর্শ করে কাজ করা আদৌ কি সম্ভব?? যদি এটা সম্ভব হয় তাহলে নেতা এবং সর্বস্তরের মানুষের জন্য সেটা মঙ্গলজনক, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না বলেই সমাজে বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, যা কারো জন্য মঙ্গলজনক ফল বয়ে আনে না।

*মানুষের ব্যক্তিত্ব ও চিন্তা চেতনাকে মূল্যায়ন করার ক্ষতা নেতাদের থাকতে হবে, তাদেরকে বুঝতে হবে কাকে দিয়ে চা আনাবেন, কাদেরকে দিয়ে ছাতা ধরাবেন আর কাদেরকে নিয়ে সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের পরামর্শ করবেন। জোয়ারে গা ভাসিয়ে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে নিজেকে নেতা মনে করা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।

সমাজের সর্বস্তরর মানুষের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।

নেতৃত্বের সঙ্গে সমাজের পরিবর্তন ও উন্নয়নের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সামাজিক নেতৃত্ব বিকাশের জন্য প্রথমেই লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। যিনি নেতৃত্ব দেবেন, তাঁর মধ্যে থাকতে হবে অন্যদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা। তাঁকে বুদ্ধিমান, আত্মবিশ্বাসী ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন ব্যক্তি হতে হবে। ঘটনার প্রতি তাঁর কৌতূহল ও যোগাযোগ দক্ষতা থাকা অবশ্যই প্রয়োজন। না হলে তাঁর কাজ প্রকাশ পাবে না।

লেখক : আবু জাফর শিহাব (এল এল বি)

জৈন্তাবার্তা/জেএ