ফাইল ছবি
হবিগঞ্জের বিবিয়ানায় গত ১-৩ ফেব্রুয়ারি দু’দফায় কম্পনের ওয়েভ পাওয়া গেছে বলে দাবি আবহাওয়া অফিসের।
অধিদপ্তরের মেট্রোলজিস্ট রুবাইয়াত কবির জানান, উল্লিখিত সময়ের মধ্যে বিবিয়ানা এবং সংলগ্ন এলাকায় সকাল ও রাতে ভূমিকম্পের ওয়েভ রেকর্ড করা হয়েছে। যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গত ২৩ জানুয়ারি দেশে সর্বশেষ ভূমিকম্পের রেকর্ড রয়েছে।
তিনি আরো জানান, কমপক্ষে তিনটি স্টেশনে কম্পন ছাড়া ভূমিকম্পের রেকর্ড ওয়েবসাইটে সংরক্ষণ করা হয় না। ওই দিনের কম্পন সিলেট ছাড়া অন্য কোথাও পরিষ্কারভাবে রেকর্ড করা যায়নি। সে কারণে তা ওয়েবসাইটে নেই।
ওই এলাকায় বাড়ি-ঘরে ফাটলের কারণ ভূমিকম্প কি-না, জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য বলছে, গত দুই মাসে সিলেট অঞ্চলে কোনো ভূমিকম্প অনুভূত হয়নি।
এদিকে, বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র এলাকায় কাঁপুনি ও বাড়িঘরে ফাটল প্রাকৃতিক ভূমিকম্পের কারণে হয়েছে বলে দাবি করেছে পেট্রোবাংলার তদন্ত কমিটি। তবে প্রতিবেদনটি পক্ষপাতমূলক বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রতিবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। প্রতিবেদন পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মিজানুর বলেন, “বিবিয়ানার কম্পনের কারণ প্রাকৃতিক ভূমিকম্প। এখানে মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিবিয়ানা তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৭ ও ২৮ নম্বর কূপ খননের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ২৮ নম্বর কূপ খনন কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ২৭ নম্বর কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে। এদিকে, স্থানীয়দের অভিযোগ, ভুল প্রক্রিয়ায় খননের কারণেই ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। এতে বাড়িঘর ফেটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্ষতিপূরণ এড়াতে পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্ত কমিটি। হবিগঞ্জের বিবিয়ানায় কেঁপে উঠল ভূমি, শতাধিক ভবনে ফাটলহবিগঞ্জের বিবিয়ানায় কেঁপে উঠল ভূমি, শতাধিক ভবনে ফাটল নবীগঞ্জের প্রজাতপুর গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় সাংবাদিক রাকিল হোসেন জানান, কম্পনের পর স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত। স্থানীয় প্রশাসন তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘরের তালিকা করছেন। তবে স্থানীয় লোকজন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্থানীয় দীঘলবাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছালিক মিয়া বলেন, পেট্রোবাংলার তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য সঠিক নয়। আমরা আলাপ-আলোচনা করে সম্মিলিতভাবে এর প্রতিবাদ করব। এছাড়া শেভরন থেকে সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করতে সরকারের সহযোগিতা চাই।
উল্লেখ্য, নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের করিমপুরে অবস্থিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি শেভরনের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে এটি। গত ১ থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র ও সংলগ্ন এলাকায় প্রতিদিন ৩-৪ বার বিকট শব্দ ও অস্বাভাবিক কাঁপুনি অনুভূত হয়। এতে ফাটল ধরে ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক ইউনিয়নের ২০ গ্রামের দুই শতাধিক ঘর বাড়িতে। বিষয়টি একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে জানালেও ব্যবস্থা নেয়নি কেউ। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কায় দিন কাটছে স্থানীয়দের। ঘটনার পর থেকে স্থানীয়দের মধ্যে নানা ধরনের শারীরিক অসুস্থতাও দেখা দিয়েছে। দানা বেঁধেছে ক্ষোভ। ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কয়েক শ’ বিক্ষুব্ধ মানুষ বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র ঘেরাও করে কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানান। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার পুলিশ, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে যান। বিষয়টি সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়াকে জানালে তার আশ্বাসে সরে যান স্থানীয়রা। ওইদিন দিবাগত মধ্যরাতে ফের অতিরিক্ত কাঁপুনি অনুভূত হলে আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। ৪ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) ফের বিক্ষোভে নামেন তারা। স্থানীয়রা বিবিয়ানার কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ, সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘরবাড়িতে ফাটলের ঘটনায় শেভরনের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি অন্যথায় কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন। ক্ষোভের মুখে ওই দিন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রোডাকশন বিভাগ সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্যরা হলেন- সদস্য সচিব বাংলাদেশ তেল গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন ডেভেলপমেন্ট ও প্রোডাকশনের মহা-ব্যবস্থাপক মো. সালাহ উদ্দিন, সদস্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের ভূতাত্ত্বিক বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন।
জৈন্তাবার্তা/জেএ