রঙ্গিন ফুলকপি চাষে স্বপ্ন দেখছেন লোকসানে হতাশাগ্রস্থ মিঠুন
শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৩

রঙ্গিন ফুলকপি চাষে স্বপ্ন দেখছেন লোকসানে হতাশাগ্রস্থ মিঠুন

সৈয়দ হেলাল আহমদ বাদশা, স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১২/০২/২০২৪ ০৪:৩৯:০৯

রঙ্গিন ফুলকপি চাষে স্বপ্ন দেখছেন লোকসানে হতাশাগ্রস্থ মিঠুন

ফুলকপি হাতে হাস্যোজ্জ্বল মিঠুন।


সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার একজন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ছয় জাতের রঙ্গিন ফুলকপি চাষ করে পাঁচ গুন লাভের প্রত্যাশা করছেন। তার বাগানে হাজারো ফুলকপির সবুজ পাপড়িতে মোড়নো রং বেরঙের ফুলকপিতে উকি দিচ্ছে রঙ্গিন স্বপ্ন। দুই লাখ টাকা বিনিয়োগে ৬ বিঘা জমিতে সাদা ব্রোকলি সবুজ বেগুণী হলুদ ছয় জাতের ফুলকপি চাষ করে পাঁচ গুণ লাভের আশা করছেন সফল কৃষক মিঠুন দে। তিনি ফতেপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বড়নগর গ্রামের বাসিন্দা। এ পর্যন্ত বিক্রির মাধ্যমে লাখ টাকা আয় করেছেন তিনি।

জানা যায়, অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে এইচএসসি পাশ করার পর পড়াশোনাটা আর নিয়মিত করতে পারেননি মিঠুন। ২০১৩,২০১৬ ও ২০১৭ সালে পোলট্রি খামার সহ বিভিন্ন ব্যবসায় বারবার বড় ধরনের লোকসান গুণার পর হতাশায় ডুবে ১৮ লক্ষ টাকা ঋণগ্রস্থ হয়ে বিভিন্ন মানুষের কটুকথা তিরস্কার লাঞ্চনা বঞ্চনা সইতে না পেরে আত্মহত্যার করার মতো সিদ্ধান্ত নেন। 

 তখনই তার পাশে দেবদূত হয়ে দাঁড়ায় উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস।প্রাথমিকভাবে আর্থিক সহযোগিতা না করলেও শোনায় শান্তনার বাণী দেখায় আশার আলো, হৃদয়ে জাগায় বেঁচে থাকার স্পৃহা। এমনটাই জানান সফল কৃষক রঙ্গিন ফুলকপি চাষী মিঠুন দে।

 উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা তাকে অফিসে ডেকে নিয়ে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেন।যুব উন্নয়নের পরামর্শ মোতাবেক প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে তিনি গত বছর অল্প জায়গায় রঙ্গিন ফুলকপি চাষ করেন।সেখানে তিনি সফলতা পেয়ে এ বছর বাণিজ্যিকভাবে ছয় বিঘা জমিতে রঙ্গিন ফুলকপি চাষ করেছেন। সেই রঙ্গিন ফুলকপির হাসি ভুলিয়েছে তাঁর লোকসানের বেদনা নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন একসময়ের ঋণগ্রস্ত হতাশায় জর্জরিত কৃষক মিঠুন দে। তিনি জৈন্তাবার্তার প্রতিবেদকে আরো জানান, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসে যাওয়ার মত পকেটে ভাড়া ছিল না,উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা তাকে ১০০০ টাকার নোট দিয়েছেন পকেট খরচ করার জন্য 

 সাথে দিয়েছেন প্রশিক্ষণের সুযোগ ও স্বল্প ঋণের ব্যবস্থা।যার কারণে তার আজকের এই অবস্থান।

 বর্তমানে তার রঙ্গিন ফুলকপি বিক্রি  করে বিনিয়োগের ২ লক্ষ টাকা তুলে লাখ টাকা  আয় করেছেন।এখন যা বিক্রি হচ্ছে তা লাভের মধ্যে রয়েছে। বিনিয়োগের চাইতে পাঁচ গুণ লাভের আশা করছেন তিনি। রঙিন ফুলকপি চাষের বিষয়টি নতুন হওয়ায় আশপাশের অঞ্চলের মানুষ প্রতিদিন তার ক্ষেত দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন।জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এই ফুলকপি চাষ নিয়ে তৈরি করছেন তার সাফল্য গাঁথা প্রতিবেদন।

 সফল কৃষক মিঠুন দে বলেন,সঠিক শ্রম ও অদম্য ইচ্ছা শক্তি থাকলে কৃষির যেকোনো বিভাগের সফল একজন  উদ্যোক্তা হওয়া অসম্ভবের কিছু নয়।বাজার মূল্য নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট থাকলেও যারজাতকরণে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমি শহরে বিক্রি করতে পারছি না, তাই মনে দুঃখ রয়ে গেল।গ্রামের মানুষের রঙ্গিন ফুলকপির সৌন্দর্য দেখতে আগ্রহ বেশি। ক্রয় ক্ষমতা কম থাকার কারণে গ্রামে বিক্রি হয় কম।শহরের মানুষের এটার সাথে পরিচিতি আছে এবং রঙ্গিন ফুলকপির গুনাগুন সম্পর্কে তাদের ধারণা রয়েছে।তারা রঙিন ফুলকপি দেখলে আনন্দচিত্তে ক্রয় করে।তাই শহরে যে কোন জায়গায় বসে বিক্রি করতে পারলে আমার মুনাফা আরো বেশি হতো।

ফতেপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ন আহ্বায়ক মাসুক আহমদ বলেন,মিঠুন অদম্য ইচ্ছা শক্তির একজন কৃষক।তার পরিশ্রম ও প্রবল ইচ্ছা শক্তিতে সে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।আমরা যদি কৃষিতে উৎপাদিত পণ্যগুলো বিক্রির মাধ্যমে বা বিভিন্নভাবে সহযোগিতার হাত বাড়াই তাহলে মিঠুনের মত তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে।

সমাজ সচেতন একজন ব্যক্তি ডা.শাহনুর আলম বলেন, কৃষির সাথে যারা সম্পৃক্ত তারা এক একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক এবং যোদ্ধা।তারা যদি হতাশ হয়ে কৃষি কাজ বন্ধ করে দেয় তাহলে আমাদের সমাজের পরিণতি হবে ভয়ংকর।তাই কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলের কর্তব্য।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছর যাবত উপজেলায় রঙ্গিন ফুলকপি চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। রঙ্গিন ফুলকপি চাষ লাভজনক পূণ্য। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাকে সার বীজ ও সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে। রঙিন ফুলকপি উচ্চ মাত্রায় আয়রন ও ক্যারোটিন সমৃদ্ধ। স্বাদ এবং পুষ্টি গুণে অতুলনীয়। যা বাণিজ্যিক কৃষিতে একটি নতুন সংযোজন।

জৈন্তাবার্তা/জেএ