ট্রাম্পের দাবিতে বেকায়দায় পড়ছেন মোদি?
বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৪:২৪ AM

ট্রাম্পের দাবিতে বেকায়দায় পড়ছেন মোদি?

জৈন্তা বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২/০৭/২০২৫ ১০:২৬:৫২ PM

ট্রাম্পের দাবিতে বেকায়দায় পড়ছেন মোদি?

ছবি : সংগৃহীত


হাতে সময় আছে আর মাত্র এক সপ্তাহ। এর মাঝেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে ভারতকে। চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব না হলে গুনতে হবে বর্ধিত শুল্ক। গত কয়েক মাস ধরে সমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। সেই আলোচনা এখনও অব্যাহত আছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার বলেছেন, ‌‘আমার মনে হয়, আমরা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে চলেছি। এটা অন্য ধরনের চুক্তি হবে। এটা এমন এক চুক্তি হবে, যেখানে আমরা ভেতরে ঢুকতে পারব। এখন ভারত কাউকে (পণ্য) ভেতরে ঢুকতে দেয় না। আমি মনে করি, এবার তারা দেবে। ভারত যদি এবার ঢুকতে দেয়, তাহলে আমরা অনেক কম শুল্ক চালু করে চুক্তি করতে পারব।’

ট্রাম্প আগেও বলেছেন এবং খুব স্পষ্ট করে বলেছেন,  চুক্তি করতে গেলে আমেরিকাকে ভারতের বাজারে ঢুকতে দিতে হবে। ভারত নিজের দেশের সংস্থা, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে প্রচুর শুল্ক বসিয়ে রেখেছে। আমেরিকা চাইছে, ভারত এই শুল্ক অনেকটা কমিয়ে কৃষি, ডেইরি ও নির্দিষ্ট শিল্পক্ষেত্রে মার্কিন পণ্য ও সংস্থার প্রবেশের পথ প্রশস্ত করুক। না হলে চড়া হারে শুল্ক বসিয়ে ভারতীয় পণ্যের আমেরিকায় ঢোকার পথ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

• ভারতের সমস্যা

যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ভারতীয় প্রতিনিধিদল মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন। এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন রাজেশ আগারওয়াল। তার ভারতে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু আলোচনা শেষ হয়নি বলে তিনি এখনও ওয়াশিংটনে রয়েছেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, অত্যন্ত জটিল বাণিজ্য আলোচনা চলছে। আশা করি,  আলোচনা সফল হবে। কিছু গিভ অ্যান্ড টেক বা দেওয়া-নেওয়ার বিষয় থাকবে।

ওয়াশিংটন সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের রিচার্ড রসো বিবিসিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কৃষিক্ষেত্রে ঢুকতে চায়। আর আর্থিক ও রাজনৈতিক কারণে ভারত তাদের কৃষকদের রক্ষা করতে চায়।

ভারত আপেল, বাদাম, জেনেটিক্যালি মডিফায়েড (জিএম) শস্যের ওপর শুল্ক কমিয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা ওয়াশিংটনের। এর ফলে আমেরিকা এসব পণ্য ভারতে রপ্তানি করতে পারবে। এছাড়া ভারতীয় দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর শুল্ক হ্রাস চায় যুক্তরাষ্ট্র।

সূত্র বলছে, ভারত চাইছে, দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য ও জিএম শস্যকে বাদ রেখে এখন চুক্তি হোক। কিন্তু আমেরিকা চাইছে, ভারত তাদের পণ্য ঢোকার সুযোগ করে দিয়ে শুল্ক কম করুক। বিনিময়ে আমেরিকাও ভারতীয় পণ্য যাতে আরও বেশি করে সেদেশে ঢুকতে পারে, সেজন্য শুল্ক কম করবে। ট্রাম্প যে কম শুল্ক চালু করার জন্য চুক্তির কথা বলেছেন, তার মূল সূত্র এটাই।

ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা এবং কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান সুমিত দত্ত মজুমদার বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে শুল্ক কম করা হলে ভারতের কৃষকরা তো অসুবিধায় পড়বেনই।

কৃষি বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক হরবীর সিং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের সঙ্গে ভারতের কৃষকদের কোনও তুলনা হয় না। আমেরিকায় ১ কোটি ৮০ লাখ কৃষক এবং ভারতের কৃষকের সংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি, যাদের মধ্যে ৮৯ শতাংশ ছোট ও মাঝারি কৃষক। ফলে তাদের সুরক্ষা প্রয়োজন। আমেরিকায় সরকার বিভিন্নভাবে কৃষকদের ভর্তুকি দেয়। তাদের ভর্তুকির পরিমাণ ভারতের কৃষকদের তুলনায় অনেক বেশি। তাই আমেরিকার ও ভারতীয় কৃষকদের কোনও তুলনা হয় না। ভারতীয় কৃষকদের আমরা বাজারের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না।'

দ্য সক্রেটারিয়েটের সম্পাদক এবং দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা করা জয়ন্ত রায়চৌধুরী বলেন, কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে ভারত শুল্ক কমাবে। কিন্তু চাল-গমের মতো খাদ্যশস্যের ওপর নয়। তেমনই ডেইরির ক্ষেত্রে স্পেশালাইজড চিজের মতো কিছু পণ্যে শুল্ক কমবে। কিন্তু বাকি পণ্যে কমার সম্ভাবনা কম।

• রাজনৈতিক প্রভাব

হরবীর মনে করেন, কৃষি ও ডেইরিতে শুল্ক প্রচুর কমালে একটা ধারণা তৈরি হবে, সরকার কৃষক-বিরোধী কাজ করেছে। ডেইরির সঙ্গেও আট কোটি মানুষ জড়িত। পেস্তা, হ্যাজেলনাট, অ্যামন্ড আমরা প্রচুর পরিমাণে আমদানি করছি। আমেরিকা আপেলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমাতে বলেছে। তারা সয়াবিন ও কর্ন ঢালাও রপ্তানি করতে চায়। তাদের কৃষকদের ভারতের বাজার দরকার। তাদের সব দাবি মেনে নিলে ভারতে রাজনৈতিকভাবে বিপাকে পড়বে শাসক দল বিজেপি।

জয়ন্ত রায়চৌধুরীও বলছেন, কৃষি ও ডেইরিতে আমেরিকার সব দাবি মানতে হলে রাজনৈতিক সমস্যা হবে। সেটা সরকার চাইবে না। আবার আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চালু রাখাটা জরুরি। তাই কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক কমিয়ে, কিছু ক্ষেত্রে অনড় থেকে পরিস্থিতি সামলাতে চাইছে ভারত।

সেজন্যই এই বাণিজ্য চুক্তি, শুল্ক নিয়ে আলোচনা একটা কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জৈন্তাবার্তা / মনোয়ার