
ফাইল ছবি
লিবিয়ার যুদ্ধবাজ নেতা ওসামা আল-মাসরিকে লিবিয়ায় ফিরে যেতে দেওয়ার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইতালিকে তাদের পূর্ণ সহযোগিতার বাধ্যবাধকতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। আল-মাসরির বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ এবং নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) পরোয়ানা জারির পর আল-মাসরিকে গ্রেপ্তার করেছিল ইতালি। 'টেকনিক্যাল কারণ' উল্লেখ করে তাকে মুক্তি দেওয়ায় আইসিসির সমালোচনার মুখে পড়েছেন ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি এবং তার সরকার। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আইসিসি কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া জানালেও সে বার্তায় আদালতের ক্ষোভ স্পষ্ট।
এক বিবৃতিতে আইসিসি ইতালিকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, তারা তাদের মামলার ব্যাপারে ‘সম্পূর্ণ সহযোগিতা’ করতে বাধ্য। আদালত বলেছেন, রোম এ ব্যাপারে ঠিক কী করেছে সে তথ্যের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
ওসামা আল-মাসরি, ওসামা আনিজেম নামেও পরিচিত। আল-মাসরি লিবিয়ার সংস্কার ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান নামে সরকারসমর্থিত বিশেষ প্রতিরক্ষা বাহিনী দ্বারা পরিচালিত কুখ্যাত আটককেন্দ্রগুলোর একটি নেটওয়ার্কের ত্রিপোলি শাখার প্রধান।
রোববারই তুরিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল আল-মাসরিকে। আগের রাতে তুরিনের মাঠে জুভেন্তাস এবং এসি মিলানের মধ্যে অনুষ্ঠিত ফুটবল ম্যাচটি দেখছিলেন তিনি।
এর একদিন আগেই আল-মাসরির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আইসিসি। আল-মাসরিকে ২০১৫ সাল থেকে লিবিয়ার মিটিগা কারাগারে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং যৌন সহিংসতার মতো অভিযোগ। প্রমাণিত হলে এসব অপরাধের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
আইসিস জানিয়েছেন, শনিবারই ইতালিসহ আইসিসির সদস্য দেশগুলোতে পরোয়ানাটি পাঠানো হয়েছে। ইউরোপে প্রবেশের পয়েন্টগুলোতেও তাৎক্ষণিক তথ্য সরবরাহ করেছে আদালত।
কিন্তু আল-মাসরিকে গ্রেপ্তারে 'পদ্ধতিগত ত্রুটি হয়েছে' উল্লেখ করে রোমের আপিল আদালত মঙ্গলবার তাকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। এর পরপরই ইটালির সিক্রেট সার্ভিস একটি বিমানে তাকে লিবিয়ায় ফেরত পাঠায়।
ইতালির আপিল আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের বিষয়টি আগে বিচারমন্ত্রী কার্লো নর্দিওকে জানানো উচিত ছিল। কারণ, বিচার মন্ত্রণালয়ই আইসিসির সঙ্গে সব যোগাযোগ রক্ষা করে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো আল-মাসরিকে ছেড়ে দেওয়ায় ইতালির সমালোচনা করেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ইউরোপ বিষয়ক গবেষণা বিভাগের উপ-পরিচালক এস্থার মেজর বলেছেন, “এটি ভুক্তভোগী, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের ওপর একটি আঘাত। এর ফলে লিবিয়ায় দায়মুক্তির চক্র ভাঙার সুযোগ হারালো।”
ত্রিপোলিতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের সঙ্গে ইতালির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভূমধ্যসাগরে উপকূলে টহল এবং অভিবাসীদের সমুদ্র যাত্রায় বাধা দিতে দেশটির উপকূলরক্ষীদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে ইটালি।
আইসিসিতে আল-মাসরির বিরুদ্ধে চলা মামলাটি ইতালির অভিবাসননীতি এবং লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের প্রতি দেশটির সহযোগিতার বিষয়ে আবার বিশ্বের মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে পারে। লিবিয়ার আটককেন্দ্রগুলোতে অভিবাসীদের ওপর গুরুতর নির্যাতনের নানা ঘটনা নথিভুক্ত করেছে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো। তাদের অভিযোগ, ইটালিও এক্ষেত্রে সহযোগী ভূমিকা রেখে আসছে।
জৈন্তাবার্তা / মনোয়ার
