
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জের শাল্লায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে শেষ পর্যন্ত ত্রিমুখী লড়াই হবে বলেই ধারণা করছেন স্থানীয় ভোটাররা। এই তিনজন হলেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান এ্যাড: দিপু রঞ্জন দাশ,সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড: অবনী মোহন দাশ ও উপজেলা বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি গনেন্দ্র চন্দ্র সরকার। ভোটযুদ্ধে নামা চার প্রার্থীর মধ্যে নানা সমীকরণে সাধারণ ভোটাররা বেশি আলোচনায় রাখছেন বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান এ্যাড: দিপু রঞ্জন দাশকে। ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এ্যাড: দিপু রঞ্জন দাশ টানা পাঁচ বছর ভাইস-চেয়ারম্যান পদে থাকার সুবাদে তৃণমূল জনগণের সাথে মিশতে ও চলতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি তার পদে ক্ষমতা থাকা অবস্থায় সাধারণ মানুষকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড করে ইতোমধ্যেই ভোটারদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন বলে আলোচনা করা হচ্ছে।
অনেকের ভাষ্যমতে,নিজস্ব একটি ভোট ব্যাংক নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড: অবনী মোহন দাশও। তবে অনেকে এ-ও বলছেন অবনী মোহন দাশ ইতোমধ্যে দিরাই-শাল্লার সাবেক বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের উন্নয়নমূলক কাজের অবদান অস্বীকার করে বক্তব্য দেওয়ায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রেমীদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। ভোটের মাঠে অবনী মোহন দাশের জন্য সেটাও একটা বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে বলে অনেকের মুখেই আলোচনা শুনা গেছে।
এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বেশ কয়েকবার নির্বাচন করার পরে ২০০৯ সালে ১ম বার চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছিলেন অবনী মোহন দাশ। এরপর আরো বেশ কয়েকটি নির্বাচন করেও জয়লাভে ব্যর্থ হন তিনি। এবং অনেকের সাথেই কথা বলে জানা গেছে তিনি একবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েও শাল্লায় দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন করতে পারে নি। বিভিন্ন কারনে বেশকিছু বছর রাজনৈতিক নানা কর্মকাণ্ড থেকেও দূরে ছিলেন এ্যাড: অবনী মোহন দাশ। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তার পক্ষে কাজ করে রাজনীতিতে তিনি আবার নতুনভাবে সক্রিয় হয়েছেন। অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের উন্নয়নকে অস্বীকার করায় সাংসদ ড. জয়া সেনগুপ্তা ও অবনী মোহন দাশের মধ্যে বিস্তর ফারাকও দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে বেশ কয়েকবার নির্বাচন করে একবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন বিএনপির সভাপতি গনেন্দ্র চন্দ্র সরকার। তার দাবি তিনি বিএনপি সমর্থিত হওয়ায় ও তার দল ক্ষমতায় না থাকায় জনগণের জন্য তেমন কিছু করতে পারেন নি তিনি।
একাধিকবার নির্বাচন করে উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান পদে বিগত নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন এ্যাড: দিপু রঞ্জন দাশ। সাধারণ ভোটারের ভাষ্য এ্যাড: দিপু রঞ্জন দাশ তার সাধ্যের ভেতরে থেকে পাঁচ বছরে বিভিন্নভাবে মানুষের মন জয় করতে পেরেছেন তিনি। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিগত পাঁচ বছরের অক্লান্ত সেবা ও পরিশ্রমের সুফল পাবেন বলে দাবি করেছেন এ্যাড: দিপু রঞ্জন দাশের সমর্থকেরা।
বেশ কিছুদিন উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সরেজমিনে ঘুরে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জোড়ালোভাবে একটি মতামত পাওয়া গেছে যে এবছর উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রত্যেকেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও এ্যাড: অবনী মোহন দাশ,গনেন্দ্র চন্দ্র সরকার ও এ্যাড: দিপু রঞ্জন দাশের মধ্যেই ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে ভাইস-চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি এ্যাড: দিপু রঞ্জন দাশ। সে সুবাদে এবং বিভিন্ন সমীকরণ টেনে বোঝাই যায়, এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে।
নির্বাচনী বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হলে গনেন্দ্র চন্দ্র সরকার বলেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও জনগণের দাবির পরিপেক্ষিতে আমি নির্বাচনে এসেছি। তিনি বলেন দল আমাকে বহিষ্কার করুক আর যাই করুক আমার নির্বাচনে এসব বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। এবিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য এ্যাড: অবনী মোহন দাশকে একাধিকবার ফোন করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এবং তার নির্বাচনী অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
নির্বাচনী বিষয়ে এ্যাড: দিপু রঞ্জন দাশ বলেন আমি তৃণমূলের লোক। আমি তৃণমূল জনগণের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে এসেছি। জনগণই আমার নেতা উল্লেখ করে তিনি বলেন বিগত নির্বাচনে জনগণ বিপুল ভোটে আমাকে ভাইস-চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছিলেন। এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন,জনসেবা,দারিদ্র্য বিমোচন ও এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্য নিয়েই আমি নির্বাচনে এসেছি। জনগণ তাকে বিপুল পরিমাণে ভোট দিয়ে জয়লাভ করাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে এই তিনজন ছাড়াও চেয়ারম্যান পদে আরেকজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি হলেন জাগ্রত হাওরের সভাপতি এস এম শামীম।
এলএইচ
