যাদুকাটা নদীর পাড় কেটে বালু লুটের সাথে জড়িত ৭০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে
বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৪ AM

যাদুকাটা নদীর পাড় কেটে বালু লুটের সাথে জড়িত ৭০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪/১০/২০২৫ ১০:৪৫:২৭ PM

যাদুকাটা নদীর পাড় কেটে বালু লুটের সাথে জড়িত ৭০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে

ছবি: নিজস্ব


সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর পাড় রক্ষা ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে যাদুকাটা নদীর তীরে লাউড়েরগড় খেলার মাঠে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়৷


তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান মানিকের সভাপতিত্বে  মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন জাদুকাটা-১ এর ইজারাদার নাসির মিয়া। এসময় স্থানীয়দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউপি সদস্য আব্দুর রশীদ, স্থানীয় বাসিন্দা ও ইত্তেফাক প্রতিনিধি আলম সাব্বির প্রমুখ।

স্থানীয় বাসিন্দা আলম সাব্বির বলেন, নদীর পুর্বপাড়ের সাধারণ মানুষকে নিয়ে আগেও নদীর পাড় রক্ষা করেছি। এখনও রক্ষা করার চেষ্টা করছি। কিন্তু কিছু মানুষ নদীর তীর কেটে বালু বিক্রি করছেন। তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রশাসনকে আরও কঠোর হওয়ার কথাও জানান তিনি।


যাদুকাটা নদীর ইজারাদার নাসির মিয়া বলেন, নদীর পাড় কাটা বন্ধ হোক, এটা সবসময়ই চাই; আমরা গ্রামবাসীর সহযোগিতা চাই। নদী বন্ধ হলে স্থানীয় প্রায় ৭০ হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়বে। আমাদের প্রতিপক্ষরা আমাদের ডিস্টার্ব করছে। পাড় কাটার খবর পাওয়ার পরপরই আমরা প্রশাসনকে অবগত কররি, প্রশাসনও নিয়মিত মামলা করছেন। প্রতিপক্ষরা লীজ বাতিল করায় ষড়যন্ত্র করছে। আমরা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করছি। আমাদের ৪ থেকে ৫ শ ভলান্টিয়ার আছে। বাঁশ বেড়া দিয়েও আটকানো হচ্ছে। জমির পাড়ের মালিকরা সরকারী জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করে ২০ টাকা বিক্রি করেছেন।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, কতিপয় স্বার্থন্বেসী মহল যাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালু লুট করছে। লুটের সাথে জড়িত ৭০ জনকে আমরা চিহ্নিত করেছি। কোনভাবেই বালু লুট করতে দেয়া হবেনা  যাদুকাটা নদীর সৌন্দর্য দেখতে শত শত পর্যটকরা আসেন। এ নদী নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে দেয়া হবেনা। অল্পসময়ের মধ্যে নদীর তীর কেটে যারা বালু লুট করেছে তাদের গ্রেফতার করা হবে। তিনি আরও বলেন, যাদুকাটা নদীর তীর কাটার সাথে আব্দুল কাইয়ুম মাষ্টার ও খাজা মাইনুদ্দিন সরাসরি জড়িত। তারা কোথাও পালাতে পারবেনা। পুলিশের নজরদারিতে তারা আছেন।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান মানিক বলেন, যাদুকাটা নদীর ইজারাদারকে দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। দখল বুঝিয়ে দেওয়ার পর আমরা সম্প্রতি লক্ষ্য করছি, নদীতে পাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতিকারী লোকজন নদীর পাড় কাটছে। আমরা ইতিমধ্যে বেশকিছু অভিযান পরিচালনা করেছি। ইতিমধ্যে টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত রাতেও নদীতে অভিযান করে ৪ জনকে আটক করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। নদীর পাড় কাটাসহ যেকোনো অপরাধের বিপক্ষে থাকবে উপজেলা প্রশাসন। অবৈধভাবে বালু যেন কেউ বালু উত্তোলন করতে না পারে সেজন্য অভিযান অব্যাহত আছে। এ পর্যন্ত ৪১ টি অভিযান করেছি। কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে ৬০ জনকে। বালু লুটপাটের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করা হবে এইটা আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন। 

ইউএনও আরও  বলেন, জাদুকাটা নদীতে ফুল টাইম একজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্টেট কাজ করছেন। পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করতে দাবি তুলেছি। নদীর পাড় কাটার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে। ইজারাদারকে নির্ধারিত সীমানা বুঝিয়ে দোয়া হয়েছে। তারাও যদি সীমানা অতিক্রম করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্তা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান হৃদয়, লাউড়েরগড় বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার কামাল প্রমুখ।

জৈন্তাবার্তা / মনোয়ার