
We deeply condemn the brutal killing of Muslim in Manipur.
কুকি ও মৈতৈদের মধ্যে ২০২৩ সাল থেকে চলমান সংঘাতের পর মণিপুরে শান্তির দূত হিসেবে পরিচিত মৈতৈ পাঙাল বা মণিপুরি মুসলমানদের উপর সেখানকার একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পৈশাচিক আক্রমণের খবর আবারও চাউর হলো। দিল্লী ভিত্তিক মণিপুরের ছাত্র সংগঠন "দিল্লী এসোসিয়েশন অব মণিপুরি মুসলিম স্টুডেন্টস" সংক্ষেপে DAMMS এর এক সংবাদ প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ বিকালে মণিপুরের থৌবাল জেলার লিলং এলাকার চিংজাও এ একদল সন্ত্রাসী গ্রূপ হঠাৎ আক্রমণ করে চারজন ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে ঘটনাস্থলেই নৃশংসভাবে হত্যা এবং চৌদ্দজন গ্রামবাসীকে গুরুতর আহত করে। আক্রমণকারীরা নিজেদেরকে মৈতৈ সংগঠন আরামবাই টেংগোল এর সদস্য বলে পরিচয় দেন। আরামবাই টেংগোল হচ্ছে মৈতৈদের আদি ধর্ম সানামাহি ধর্মকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য আন্দোলনকারী একটি সশস্ত্র সংগঠন। এরা পুনরুত্থানবাদী। সমালোচকরা এদেরকে একটি চরমপন্থী সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করেন, যারা 2023 সালের মণিপুর সহিংসতার সময় কুকি জনগণের সাথে জাতিগত সংঘর্ষে জড়িত ছিল।
কিন্তু আরামবাই টেংগোল সংগঠনটি মুসলমানদের উপর এ সশস্ত্র হামলায় তাদের সংশ্লিষ্টতা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। তারা নাকি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ঘটনার সাথে তাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। তাদের দাবি অন্য কোন গ্রুপ ঘটনা ঘটিয়ে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে তাদের নাম ব্যবহার করেছে। ঘটনার আকস্মিকতায় নিহতের স্বজনরাও নিখুত কোন প্রমান হাজির করতে পারেনি। ঘটনা যেই ঘটাক তবে এটা সত্য, ঘটনাটি ঘটিয়েছে আরামবাই টেংগোল এর নামে। তাই সন্ত্রসীদের চিহ্নিতকরণে আরামবাই টেংগোলেরও দায় দায়িত্ব রয়েছে, অনুরূপভাবে মাণিপুর সরকারেরও।
তাই, আরামবাই টেংগোলেরও উচিত সন্ত্রসীদের সনাক্ত করণে সরকারকে সহযোগিতা করা এবং মাণিপুর সরকারের উচিৎ কালবিলম্ব না করে সন্ত্রসীদের সনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি মণিপুরে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কোন কোন মহল থেকে মুসলমানদের উপর সশস্ত্র আক্রমণ করে হত্যা, গুম ইত্যাদি ঘটিয়ে বিষয়টিকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। আইন শৃংখলা বাহিনীও তখন নিরব, নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আমাদের প্রত্যাশা এবারে যেন বিষয়টি এমনতরো না হয়। নতুবা ১৯৯৩ সালের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়।
মণিপুরে মুসলমানদের সংখ্যা অতি নগন্য। মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯/১০ পার্সেন্ট মাত্র। ৩২ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ৩ লক্ষ মুসলমান। সংখ্যাসল্প এ জাতি মণিপুরের ক্রান্তিকালে সবসময় অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। বার্মার মণিপুর আগ্রাসন, এংলো মণিপুর যুদ্ধ, নুপি লান থেকে শুরু করে মণিপুরের প্রতিটি সংকট কালে জান -মাল বাজি রেখে স্বদেশ প্রেমের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে আসছে। আধুনা মৈতৈ-নাগা সংকটেও মণিপুরের অখন্ডতা রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। প্রকাশ্যে কোন পক্ষ অবলম্বন না করে অখন্ড মণিপুরের কথা বলেছে। কোন কোন জায়গায় কুকিদের আক্রমণের শিকার হয়ে উদবাস্তু হয়েছে। তার পরও সকল পক্ষকে অস্ত্র সংবরণ করে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছে।
সদ্য সমাপ্ত সংকটে ইম্ফল উপত্যকার খাদ্য ও রসদ সরবরাহ করতে গিয়ে মণিপুরি মুসলিম ড্রাইভাররা নিজের জানকে বাজি রেখে নিরপেক্ষতার ব্যানারকে উচিয়ে ধরে নাগা অধ্যুষিত অঞ্চলের উপর ট্রাক ও লড়িগুলো সচল রেখেছিল। এ মানবিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে উপত্যকার মৈতৈ জাতির একাংশ তাদেরকে সন্দেহের চোখে দেখেছে। অপর দিকে মণিপুরি মুসলমানদের বসবাস উপত্যকায় মৈতৈদের সাথে হওয়ায় নাগারাও তির্যকভাবে তাকিয়েছে। কোন কোন জায়গায় অঘটনের শিকারও হতে হয়েছে। তবে মণিপুরি মুসলমানদের এ অবদান মণিপুরের মৈতৈদের একাংশ এবং মণিপুরের চীফ মিনিষ্টার সয়ং অনুধাবন করতে পেরেছে।
পরিশেষে আমি মণিপুরের চীফ মিনিষ্টার মি. এন বিরেন সিংকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, তিনি মুসলমানদের উপর সন্ত্রাসী আক্রমণের পর ঘটনার গভীরতাকে উপলব্ধি করতে পেরে, সময় ক্ষেপন না করে লিলং এ সংক্ষুব্ধদের ঘরে ঘরে ঘুরেছেন। সামাজিক নেতৃবৃন্দের সাথে বসেছেন, আশ্বস্ত করেছেন দোষীদের খুজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের। আমরা আশা করবো অতিশিঘ্রই, মাননীয় চীফ মিনিষ্টার মহোদয় তাঁর আশ্বাসকে বাস্তবে রূপ দিয়ে মণিপুরের সংখ্যলঘু মুসলমানদের আস্থা অর্জন করবেন।
হাজী মো. আব্দুস সামাদ
লেখক ও গবেষক
জৈন্তাবার্তা/এমকে
