জগন্নাথপুরে ভালো নেই ৫০টি বেদে পরিবার
শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৭:০৩

জগন্নাথপুরে ভালো নেই ৫০টি বেদে পরিবার

রেজুওয়ান কোরেশী, জগন্নাথপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৯/০৪/২০২৫ ০৯:৫৮:০৩

জগন্নাথপুরে ভালো নেই ৫০টি বেদে পরিবার

ছবি: নিজস্ব


সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর শহরের নলজুর নদীর তীরে ৫০টি বেদে পরিবার বছরের পর বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। কেউ ডিঙি নৌকায়, কউে বা নদীর পাড় খুঁড়ে তাঁবু তৈরি করে দিন কাটাচ্ছেন। উন্নতির আশার বাণী তারা অনেক শুনেছেন, কিন্তুু বাস্তবে তাদের জীবন থেকে কষ্ট কোনদিনই কমেনি । এক বয়োজ্যেষ্ঠ বেদে আক্ষেপ করে বলেন, ‘অনেক আশার কাথা শুনেছি। শুধু শুধু ছবি তুলে কষ্ট বাড়াবেন না।’

হতদরদ্রি এই মানুষদের তৃষ্ণা মেটায় নদীর অপরিশোধিত পানি। বিদ্যুৎ নেই, তাই রাত কাটে অন্ধকারের সাথে। নেইে কোনো স্যানিটেশন ব্যবস্থা। জীবিকা যেখানে কঠিন, সেখানে এখনো তারা বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে বেচে আছেন। শিঙ্গা লাগানো, সাপের খেলা ও বানরের খেলা দেখানো এবং তাবিজ বিক্রি তাদের কাজ। কেউ কেউ হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণের খোঁজে পুকুরে ডুব দেয়ার কাজও করেন।

তবে এখন আর আগের মতো গ্রামে সাপের  খেলা কিংবা তাবিজের চাহিদা নাই। সাধারণ মানুষরে মধ্যে যত বেশি কুসংস্কার দূর হচ্ছে, ততআয় কমছে তাদের। তবুও যুগের পর যুগ ধরে পৈতৃক পেশা ছাড়তে পারেননি তারা। আধুনিক শিক্ষার আলো তাদের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। ফলে নতুন প্রজন্মও আটকে আছে অজ্ঞতা, স্বাস্থ্যহীনতা আর দারিদ্রের দুষ্ঠুচক্রে। 

সরজমিনে দেখা গেছে, কেউ কেউ সাপের খেলা কিংবা তাবিজ বিক্রির চেষ্টা করছেন। বিকেল ফিরে সামান্য আয়ে সাদা ভাত আর সামান্য সবজি দিয়ে খাবার খাচ্ছেন। মাছ-মাংসের স্বপ্ন তাদের কাছে দূরের কোনো বাস্তবতা। শিশুদের নিয়ে দু-বেলা সামান্য আহার জোগাড় করাই তাদের দিনের সবচেয়ে বড় সাফল্য। 

১২ বছরের রহিমা নামের এক কিশোরী বলেন, ‘মা দিন-রাত কাজ করে দুইশ থেকে তিনশ টাকা রোজগার করে। বেশিরভাগ দিন সাদা ভাত আর সবজি ছাড়া কিছুই জোটে না। লেখাপড়ার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু খাবার না থাকলে স্কুলে যাবো কিভাবে?’

বেদের নারী সাথী বেগম বলেন, ‘আমরা চাই না আমাদের সন্তানরাও এই জীবন পাক। কন্তুি নির্দিষ্ট কোন জায়গা ছাড়া সন্তানদের পড়াশোনা করানো সম্ভব না। সরকার যদি মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই দিত, তাহলে হয়তো আমাদের সন্তানেরা ভিন্ন জীবন পেত।’

সুমন মিয়া নামের একজন বেদে জানান, তারা অনেকদিন ধরে সরকারি সহায়তার জন্য আবেদন করে আসছেন, কন্তুি এখনো কোনো ঘর বা জমির বরাদ্দ পাননি।

নলজুর নদীর পাড়ের বেদে সম্প্রদায়ের সরদার আজাদ আলী (৪৫) বলেন, ‘আমরা শুধু জগন্নাথপুরেই নই, দেশের নানা প্রান্তে এভাবেই খোলা আকাশের নিছে বসবাস করি। বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছি, কিন্তু আমাদের কেউ দেখে না।’

প্রসঙ্গত, বেদে সম্প্রদায় বাংলাদশের একটি প্রাচীন যাযাবর জনগোষ্ঠী, যাদের ইতিহাস শত শত বছরের। তারা মূলত নদী ভিত্তিক জীবনযাপন করেন, নৌকায় বসবাস করেন এবং স্থানান্তরিত হয়ে জীবিকা নির্বাহী করেন। সাপ ধরা, সাপের  খেলা দেখানো, বানরের খেলা দেখানো, শিঙ্গা লাগানো, তাবিজ বিক্রি ছাড়াও তারা ভেষজ ওষুধ বিক্রি এবং ঝাড়-ফুঁক করেন, যা গ্রামবাংলায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। বেদে সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষা রয়েছে, যা ‘ঠার’ নামে পরচিত। এই ভাষার কোনো লিখিত রূপ নেই এবং এটি শুধুমাত্র মৌখিক ভাবে ব্যবহৃত হয়। ধমীয় দিক থেকে বেদে সম্প্রদায়ের অধিকাংশ সদস্য মুসলমান। তবে তাদের ধমীয় আচরণে হন্দুি ও মুসলিম উভয় ধর্মের প্রভাব দেখা যায়। তারা পীরের অনুসারী, আবার কেউ কেউ মনসা বা বিষহরির ভক্ত।

জৈন্তাবার্তা / সুলতানা