প্রাথমিক শিক্ষা শিশুর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম পর্যায়। যে কোনো অবকাঠামোর ভিত্তি যদি মজবুত না হয় তাহলে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ বলে ধরে নেই। মানুষের প্রথম মৌলিক চাহিদা হচ্ছে খাদ্য। অথচ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের বেশি শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগে। বাস্তবতা হচ্ছে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের তোমরা কি খেয়ে এসেছ- এই প্রশ্ন করলে ৪০% শিক্ষার্থীর কাছ থেকে না বোধক উত্তর আসে। আবার কিছু শিক্ষার্থীর উত্তর থাকে ‘চা-বিস্কিট’। প্রাথমিক শিক্ষার প্রথম লক্ষ্য শিশুর শারীরিক বিকাশ সাধন। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) ২০৩০ এর লক্ষ্যমাত্রা টেকসই, গুণগত, মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। প্রাথমিক শিক্ষায় সকল শিক্ষার্থীর শ্রেণী উপযোগী প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জনে একটি বড় বাধা হচ্ছে শিক্ষার্থীর পুষ্টিহীনতা। শিক্ষার্থীরা অভুক্ত থাকলে শ্রেণী পাঠে অমনোযোগী থাকে। এসব শিশু সাধারণত খিটখিটে ও রগচটা হয়। এদের বাহ্যিক চেহারা দেখলে বুঝা যায় পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে না। ফলে প্রতি শেণিতেই কিছু শিক্ষার্থী প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জনে অক্ষম। তাদেরকেই আমরা সাধারণত পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী বলি।
বাংলাদেশে এখনো অনেক পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এসব পরিবার সন্তানদের বিদ্যালয়ের চেয়ে জীবন-জীবিকার কাজে নিয়োজিত করতে বেশি পছন্দ করে। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ এবং বিদ্যালয়ের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে উপবৃত্তির পাশাপাশি কোমলমতি শিশুদের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ নিতে হবে। কোনো কোনো জায়গায় স্থানীয় উদ্যোগে ‘মিড ডে মিল’ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। মা ও অভিভাবক সমাবেশে শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে আলোচনা করলে কিছুটা সমস্যার সমাধান হতে পারে।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে শিক্ষা অর্জন করা প্রতিটি শিশুসহ রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের অধিকার। আর এ অধিকার বাস্তবায়নে ও দেশের সকল শিশুর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে শিশুর পুষ্টি নিয়ে চিন্তা করা ছাড়া বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে পারলেই সম্ভব হবে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জন।
লেখক: মন্দিরা রানী দাস, প্রধান শিক্ষক, হাজী ফরিদ সারেং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়