র‍্যাগিং ইস্যু তে কোন ছাড়া নেই: শাবি প্রক্টর
বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪২ AM

র‍্যাগিং ইস্যু তে কোন ছাড়া নেই: শাবি প্রক্টর

ইমরান হোসেন রানা, শাবিপ্রবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩০/০৯/২০২৫ ১১:৫৩:৩৯ PM

র‍্যাগিং ইস্যু তে কোন ছাড়া নেই: শাবি প্রক্টর

ফাইল ছবি


শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) নবীন শিক্ষার্থীদের প্রতি র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় ২৫ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত ২৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় ২৫ সেপ্টেম্বর গৃহীত হয় এবং ২৮ সেপ্টেম্বর সোমবার উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

অনেকে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে যুক্তিগত মনে করলেও কিছু শিক্ষার্থী প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলছে। তাদের অভিযোগ, তারা জুনিয়র-সিনিয়র স্বাভাবিক আড্ডায় ছিল। আবার কেউ কেউ বলছে যে সমস্যা হয়েছিলো তা তারা নিজেরাই সমাধান করে নিয়েছে। ভুক্তভোগীরাও অভিযুক্তদের পক্ষ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করছে।

অর্থনীতি বিভাগের ২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী সাব্বির ভূঁইয়া বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপে লিখেন, “সম্প্রতি কিছু ভিত্তিহীন বিষয় সামনে এসেছে। আমরা যে বৈঠকে বসেছিলাম, সেটি ছিল আসন্ন বাস্কেটবল খেলা ও বিভাগের বিভিন্ন প্রোগ্রাম নিয়ে আলোচনা। আলোচনার এক পর্যায়ে সামান্য মনোমালিন্য তৈরি হলেও তা মুহূর্তের মধ্যেই মিটে গেছে। ভেতরে কোনো সমস্যা ছিল না। পরে প্রক্টর অফিসে আমাদেরকে ভয়ভীতি দেখানো হয়, ভর্তি বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়, এমনকি প্রশ্ন সাজিয়ে লিখতে বাধ্য করা হয়। প্রশাসন নিজেদের সুবিধামতো একটি কৃত্রিম গল্প তৈরি করেছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং সাজানো। আমাদের সিনিয়র-জুনিয়রদের বন্ধন সবসময় ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ও আন্তরিক। প্রশাসনের এই ভিত্তিহীন আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।”

অন্যদিকে পরিসংখ্যান বিভাগের ২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান সাকিব বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু এক পক্ষের কথা শুনে বহিষ্কার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে আদেশ এসেছে তারা সবাই নির্দোষ, এবং জুনিয়রদের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে। যেদিন ঘটনাটি ঘটেছে, আমরা সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলাম, কিন্তু র‌্যাগিং হয়নি। এক ছেলের অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে এক বছরের পর এতজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বহিষ্কার আদেশ জারি করা হয়েছে। এটি নিতান্তই প্রহসনমূলক আচরণ। আমরা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই এবং আমাদের সিনিয়রদের ন্যায়বিচারের পাশে থাকব।”

এ বিষয়ে অধ্যাপক মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, “র‌্যাগিংয়ে কোন ছাড় নাই, এটা জিরো টলারেন্স। আমরা অন দ্য স্পট ধরেছি, আমরা কারো কথা শুনে বা দ্বিতীয় পক্ষের সাক্ষের ভিত্তিতে কোন কাজ করিনি। আমরা যখন র‌্যাগিং স্পটে যাই তখন শুনেছি কেউ কেউ বলছিলো আল্লাহ একজন আছেন। আমরা চাইবো কারো দোষ ছাড়া জীবনের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হোক। র‌্যাগিংয়ের জন্য অনেক শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষ থেকেই মানসিক চাপে থাকে, পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হয়, অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েই চলে যায়।”

তিনি আরো বলেন, “যারা প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেছিলো তারা যদি মনে করে র‌্যাগিং আমাদের ভালোর জন্য ছিলো, তারা যদি তাদের অভিযোগ তুলে নেয় তাহলে এটা হায়ার অথরিটি বিবেচনায় আনবে। প্রক্টরিয়াল বডি কাউকে কোন শাস্তি নির্ধারণ করে না, সব কিছু হয় সিন্ডিকেট মিটিং থেকে। র‌্যাগিংয়ের স্বীকার শিক্ষার্থীরা এখন অভিযুক্তদের হয়ে কথা বলছে এটা ভয়ভীতি থেকে না ওদের মাঝে সব ঠিক হয়ে গেছে সেটা বিবেচনা করবে সিন্ডিকেট। তবে আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। র‌্যাগিং বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান জিরো টলারেন্স। নবীন শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের পড়াশোনায় প্রভাব পড়ে। দীর্ঘ তদন্তের পর তাই শাস্তি দেওয়া হয়েছে।”

প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, “নিজেরা মিটমাট করছে বা সমাধান হয়ে গেছে এটা তো আমরা জানি না, আমাদের না জানালে জানবো কিভাবে? ডিপার্টমেন্ট প্রধানও জানে না, জেনে থাকলেও সেটা সিন্ডিকেট মিটিংয়ে উঠে আসেনি, প্রশাসনও জানে না। এই ইস্যুটা প্রায় এক বছর ধরে ভিসি স্যারের কাছে প্রক্রিয়াধীন ছিলো, অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীরা এক হয়ে কখনো তো কোনো পদক্ষেপ নিলো না।”

তিনি আরো বলেন, “খুন হওয়ার পর মিটমাট হলে কি শাস্তি হবে না? অভিযুক্তরা একটা অন্যায় করছে এজন্য শাস্তি পেয়েছে। র‌্যাগিং অবশ্যই একটা অপরাধ। শিক্ষার্থীরা মব সৃষ্টি করে এর সমাধান করতে পারবে না, সঠিক পন্থায় আসুক, অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীরা এক হয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করুক, আমরা অবশ্যই বিবেচনা করবো।”

জৈন্তাবার্তা / মনোয়ার