বহিষ্কারাদেশে শাবি'তে মানবন্ধন, প্রশাসনের ক্ষমতা চর্চার অভিযোগ
বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪২ AM

বহিষ্কারাদেশে শাবি'তে মানবন্ধন, প্রশাসনের ক্ষমতা চর্চার অভিযোগ

ইমরান হোসেন রানা, শাবিপ্রবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৮/১০/২০২৫ ০৫:৩০:৫৬ PM

বহিষ্কারাদেশে শাবি'তে মানবন্ধন, প্রশাসনের ক্ষমতা চর্চার অভিযোগ

ছবি:নিজস্ব


সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কারসহ অর্থনীতি বিভাগের আরও ১২ জন এবং পরিসংখ্যান বিভাগের ১৩ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়।

এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করে। সেই লক্ষ্যে আজ ৮ অক্টোবর (বুধবার) বিকেল ৪ টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে জড়ো হয়ে তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে।

এসময় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে প্রহসন উল্লেখ করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। তাদের স্লোগান এবং দাবিগুলোর অন্যতম ছিল, "প্রহসনের বহিষ্কার মানি না মানবো না।" শিক্ষার্থীরা জানান, বহিষ্কার প্রত্যাহার করতে হবে, এর কোনো বিকল্প তারা মানবে না।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, এক বছর তদন্ত করেও বিভ্রান্তিকর রায় কিভাবে আসে তা অজানা। এই রায়ে পরিসংখ্যান বিভাগ ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা সহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষুব্ধ। তদন্তের সময় সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষার্থী বা বিভাগীয় প্রধানদেরও জানানো হয়নি। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, প্রশাসন তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে, যা তারা ক্ষমতার চর্চা হিসেবে অভিহিত করছেন।

প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলে এক শিক্ষার্থী বলেন, "র‍্যাগিং বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পর্বের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সম্পর্ক ও বোঝাপড়া ডিপার্টমেন্টে এসে যাচাই-বাছাই করা কোনো কঠিন বিষয় ছিল না প্রশাসনের সিন্ডিকেট সদস্যদের জন্য। ঘটনার নয় মাস পর, সবকিছু সুন্দর ও সাবলীলভাবে চলমান এমন একটি ডিপার্টমেন্টকে ওরকম ন্যক্কারজনক বিষয়ে জড়িত করার এমন অন্যায্য প্রচেষ্টা অকল্যাণ বই কল্যাণ বয়ে আনে না।"

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, "একটি ব্যাচ থেকে ১২ জন, আরেকটি ব্যাচ থেকে ১৩ জন,মোট ২৫ জন শিক্ষার্থীকে এক নিমিষে বহিষ্কার করা হলো। এটা বিচার নয়, এটা দমন। বিশ্ববিদ্যালয় কি শিক্ষার্থীদের ছাড়া শুধু বিল্ডিং আর দেয়াল নিয়ে গর্ব করবে? র‍্যাগিং ইস্যুর আড়ালে যে ক্ষমতার প্রদর্শন চলছে, তা আসলে শিক্ষার্থীদের মুখ বন্ধ করার এক নগ্ন চেষ্টা। এ বিচার নয়, এটা অন্যায়। তিনি আরো বলেন,"শিক্ষার্থীদের জীবন, স্বপ্ন আর ভবিষ্যৎ ফিরিয়ে দিন।"

অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক বা অধিকতর তদন্ত চলাকালীন বিভাগের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, "তৎকালীন শিক্ষার্থীদের স্বপ্রণোদিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমার উপস্থিতিতে বিষয়টি মিটমাট হয় এবং তারা অভিযোগ তুলে ফেলার জন্য আবেদনও করে। বিভাগের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি জানিয়ে প্রক্টরকে চিঠিও পাঠানো হয়েছিল। এসবের পরেও তদন্ত চলাকালীন বিভাগের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি।"

প্রক্টর অধ্যাপক মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, "এই চিঠিগুলো প্রক্টর অফিস রিসিভ করেনি। তবে গ্রহণ না করার যথার্থ কারণ হিসেবে বলেন, প্রথমবার সিন্ডিকেটে উঠার পর থেকেই বিষয়টি প্রক্টর অফিস থেকে চলে গিয়েছে। তারপর থেকে বিষয়টি আমাদের হাতে ছিল না। এখন যাই কিছু বলার বা করার আছে, সবই সিন্ডিকেটের হাতে।"

প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের একজন জানিয়েছেন, যদি শাস্তি প্রাপ্তরা আপিল করে এবং VC মহোদয় তা আমলে নেন, তাহলে প্রদত্ত শাস্তি কার্যকর হবে না। এর ফলে তারা পরীক্ষা দিতে পারবে। আপিল বিষয়ে নিরীক্ষা চলবে এবং দ্রুত ফলাফল জানা যাবে। এই সমস্ত বিষয় কেবলমাত্র VC-এর ক্ষমতা প্রয়োগে সম্ভব।

তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, যদি বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হয়, তবে তারা কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য হবেন।

জৈন্তাবার্তা / সুলতানা