
ছবি : সংগৃহীত
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নলজুর নদী খননে অনিয়মের কারণে গত কয়েকদিনের সামান্য বৃষ্টিতে নদী পানিতে ভরে জলাবদ্ধতা ও কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নদীপাড়ের হাজার হাজার মানুষ। অপরিকল্পিতভাবে নতুন করে নদী খনন নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দাবি উঠেছে- সরকারের সাড়ে ৫ কোটি টাকা লুটপাটের তদন্ত ও প্রতিকারের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে লোকজনকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নেশন টেক লিমিটেড সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নলজুর নদী খননের কাজ শুরু করে। কাজ চলাকালে অপরিকল্পিত খনন ও কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ওই বছরের ১৩ এপ্রিল কাজ বন্ধ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন পালিয়ে যায়। এসময় তারা বিল তুলে নেয় ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৫ মার্চ থেকে আবারও কাজ শুরু করে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নতুন করে ৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দে ১ হাজার ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩৩ ফুট প্রস্থে খনন এবং মাটি সরানোর কাজ শুরু হয়। ২ এপ্রিল আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে নলজুর নদীতে পানি চলে আসায় খনন কাজ শেষ হওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে যায়। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন আবারও খনন কাজ শেষ না করে খনন যন্ত্র নিয়ে চলে যায়।
স্থানীয়রা বলছেন, অসমাপ্ত কাজের মাধ্যমে নদীকে খালে রূপান্তর করার কারণে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই নদী টইটম্বুর হয়ে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়, তৈরি হয় জলাবদ্ধতা।
জগন্নাথপুর পৌর শহরের বাড়ী জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক, উপজেলা নাগরিক অধিকার পরিষদের আহবায় এম এ কাদির বলেন, তৎকালীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী ঠিকাদার সরকারের ৫ কোটি টাকা লুটপাট করেছে। নদীকে খাল বানানোর বিষয়ে তৎকালীন সময়ে আমরা প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয়নি। আমরা চাই তদন্তের মাধ্যমে সরকারি অর্থ লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি নদী খননের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। তিনি অভিযোগ করে বলেন, নদীকে খাল বানানোর কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই নদী পানিতে ভরে ওঠে এবং জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন নদীপাড়ের গ্রামগুলোর হাজার হাজার মানুষ।
যুবনেতা আফরোজ আলী বলেন, নলজুর নদীকে অপরিকল্পিতভাবে খননের নামে খাল বানিয়ে হরিলুট করা হয়েছে। তৎকালীন পাউবো সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী, ইউএনও ও ঠিকাদার এই লুটপাটে জড়িত। গত সরকারের শাসনামলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তদন্তপূর্বক আমরা এখন এর প্রতিকার চাই।
পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী, ফেয়ার ফেইস জগন্নাথপুরের স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, ২৫০ ফুট প্রস্থের নদীকে ৩৩ ফুটের খাল বানানো হয়েছে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই নদী ভরাট হয়ে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, হাওরে এখনও পানি নেই। কিন্তু নলজুর নদীকে দেখলে মনে হবে বন্যা হয়ে যাচ্ছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নেশন টেক এর প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী রোকন আহমেদ মুঠোফোনে বলেন, আমরা যতটুকু কাজ করেছি ততটুকু বিল পেয়েছি। কোনো ধরনের লুটপাট হয়নি। নদীতে পানি আসায় শতভাগ কাজ শেষ করা যায়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইরফানুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, নলজুর নদী খনন কাজে পাউবোর টাস্কফোর্সের জরিপ প্রতিবেদনের আলোকে ৭৭.৭৪ শতাংশ বিল পরিশোধ করা হয়েছে। লুটপাটের অভিযোগ সঠিক নয়।
জৈন্তাবার্তা / রহমান
