জগন্নাথপুরে সরকারি ঘর পেয়েও থাকেন না অনেকে
বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩২ AM

জগন্নাথপুরে সরকারি ঘর পেয়েও থাকেন না অনেকে

রেজুওয়ান কোরেশী, জগন্নাথপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪/১০/২০২৫ ১২:৪৩:৪১ PM

জগন্নাথপুরে সরকারি ঘর পেয়েও থাকেন না অনেকে


সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামে সরকারি ঘর পেয়েও থাকে না ১০টি পরিবার। এর মধ্যে দুইজন ওমানে থেকেও সরকারি ঘর পেয়েছেন বলে জানা গেছে। তারা ঘর পাওয়ার পর কিছুদিন থাকলেও প্রায় তিন বছর ধরে থাকেন না। ঘরের মধ্যে মালপত্র রেখে তালা দিয়ে ঘরটি দখল করে রেখেছেন। আবার কেউ নিজের ঘর অন্য কাউকে ভাড়া দিয়েছেন।

বনগাঁও এলাকায় সরকারি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের ঘরগুলো সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ২০২৩ সালে ৫৯টি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘরে কেউ থাকেন না।  

এ বিষয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরকত উল্লাহ'র সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, দ্রুত তদন্ত করে যারা ঘরে থাকেন না তাদের বরাদ্দ বাতিল করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও সরেজমিন ঘুরে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের জন্য জগন্নাথপুর  উপজেলার বনগাঁওয়ে প্রথম পর্যায়ে ৬০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। ঘরের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে এসব ঘরে এখনও অনেক পরিবার ওঠেনি। যাচাই-বাছাই করে ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

নতুন ঘরে একজন পরিবার নিয়ে উঠেছেন। তাঁর নাম রুমন রবিদাস। তিনি বলেন, আমার ঘরের পেছনের দরজার তালায় সমস্যা। জানালায় সমস্যা। বাথরুমের দরজার পেছনে ফাটা।

তিনি জানান, তার বাবা জামাল আহমেদ এখানে একটি ঘর (২৭ নম্বর) পাওয়ার পরও ঘরে থাকেন না। তিনি ঘরে অন্য লোককে জায়গা দিয়েছেন।

স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ১৪ নম্বর ঘরের মালিক নুর মোহাম্মদ। তিনি ওমানে থাকেন। ১৮ নম্বর ঘরের মালিকও ওমানে থাকেন। তারা বিদেশে থেকেও সরকারি ঘর পেয়েছেন আর সেই ঘরে অন্য লোককে থাকতে দিয়েছেন। 

দেখা যায়, ৪ নম্বর ঘরটি নেছার আলী নামের একজনকে দেওয়া হয়েছে। তিনিও কখনো সেই ঘরে থাকেন না। ঘরে তালা দিয়ে রেখে গেছেন। ১৭ নম্বর ঘর শিবলী বেগম, ২ নম্বর ঘর জামাল উদ্দিন, ১৩ নম্বর ঘর আনোয়ারা বেগম, ২৬ নম্বর ঘর নুর আলী, ১৪ নম্বর ঘর নুর মোহাম্মদ, ৫৯ নম্বর ঘর মিন্টু কর, ৫৮ নম্বর ঘর সুশেন কর, ৫৭ নম্বর ঘর রবি কর, ৫৬ নম্বর ঘর অখিল কর, ৫৫ নম্বর ঘর সাবিত্রী কর, ৫৪ নম্বর ঘর মঙ্গল কর, ৫২ নম্বর ঘর দিনেশ কর, ৫১ নম্বর ঘর নরেন্দ্র কর, ৪৪ নম্বর ঘর রিংকু দেব, ২১ নম্বর ঘর সুয়েল মিয়া ও ৪৫ নম্বর ঘর পটল দাশের নামে বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু এই ১৯টি ঘরে বরাদ্দ পাওয়া কেউ বসবাস করেন না। তারা সবাই রসুলগঞ্জ বাজারে বাসা ভাড়া করে থাকেন।

স্থানীয়রা বলছেন, যেদিন ঘর দিয়েছে, সেদিন তারা ঘর ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করেছেন। এরপর ঘরের জন্য কিছু মালামাল এনে সপ্তাহখানেক থেকে আর থাকেননি। 

স্থানীয় ফিরুজ আলী বলেন, ৬/৭টি পরিবার এখানে থাকবে না জানিয়ে অনেক আগেই মালপত্র নিয়ে চলে গেছে। তারা রসুলগঞ্জ বাজারে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা শিমুল আমীন বলেন, এই ঘরগুলো বরাদ্দ পাওয়ার পর যারা থাকেন না তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে সত্যতা পেলে বরাদ্দ বাতিল করা হবে। বাতিলের পর নতুন করে যারা পাওয়ার যোগ্য তাদের দেওয়া হবে। আমরা মাঝে-মধ্যে খোঁজ-খবর নিই। অনেক সময় সঠিক তথ্য জানা যায় না। কারণ অনেকেই ঘরে তালা দিয়ে কাজে যান, ফেরেন অনেক রাতে। আবার অনেকেই খুব ভোরে কাজে যান। তাই সব মিলিয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না।

তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে বনগাঁও গ্রামে যে ৬০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, সেই ঘরগুলো নির্মাণের সময় ও পরে স্থানীয় বখাটেরা প্রতিহিংসা থেকে দরজা-জানালা নষ্ট করে। পরিদর্শন করে সেগুলো ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মহসীন উদ্দিন বলেন, আমি এই উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। আমি নতুন করে তালিকা করছি। যারা ঘরে থাকেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদেরকে বাতিল করে অন্যদের ঘর বরাদ্দ দিয়ে দেবো।

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরকত উল্লাহ বলেন, বিদেশে থেকেও যারা ঘর পেয়েছেন তদন্ত করে তাদের ঘর বাতিল করা হবে। যারা ঘরে থাকেন না, তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে বরাদ্দ বাতিল করা হবে। এ ব্যাপারে কাজ শুরু হয়েছে। যারা থাকেন না তাদের বাদ দিয়ে, যারা পাওয়ার যোগ্য তাদের নতুনভাবে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে। আগামীতে আমাদের সভা আছে। সেখানে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

জৈন্তা বার্তা/আরআর