
ছবি : ফাইল ফটো
তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোন মানুষকে যেমন করেছে আধুনিক ও সামাজিক, ঠিক তেমনি আবার সামাজিক অবক্ষয়ও বাড়িয়েছে। ইন্টারনেট জগতে অনলাইন জুয়ার অ্যাপসের সহজলভ্যতা রয়েছে। যে কেউ চাইলে সহজেই সফটওয়্যার সেটআপ করে ঘরে বসেই অ্যাকাউন্ট খুলে অনলাইনে জুয়া খেলতে পারছে। আবার এসব অনলাইন জুয়াতে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য জুয়ার সাইটগুলো কমিশনের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে। পাশাপাশি লোভের ফাঁদে ফেলার জন্য বিভিন্ন ধরনের ডেমো অ্যাকাউন্টে অধিক লাভ দেখিয়ে ভিডিও বানানো হয়, যা মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট করে। অ্যাপসগুলো এমনভাবে সাজানো থাকে, যার ফলে শুরুতে লাভ পাওয়া যায়।
ইদানীং হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে অনেক শিক্ষিত যুবক বা তরুণকে দেখা যাচ্ছে অধিক লাভের আশায় অনলাইন জুয়ায় টাকা বিনিয়োগ করতে। পরবর্তীতে সব হারিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। অনেক ব্যক্তি ও পরিবার আজ নিঃস্ব হয়ে ধ্বংসের পথে এই অনলাইন জুয়ার কারণে। গ্রাম এলাকাতে শ্রমজীবী মানুষ দিনের মজুরিটুকুও এই পথে নষ্ট করছে। সন্ধ্যার পর অনেকের কাছে বিনোদনের মাধ্যম হচ্ছে এই সর্বনাশা জুয়া।
অনলাইন জুয়ার আসক্তি মাদকের আসক্তির থেকেও ক্ষতিকারক। আরেকটা হতাশার বিষয় হচ্ছে, অ্যাকাউন্টে রিচার্জ করা টাকা অবৈধভাবে চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। আজমিরীগঞ্জে অপর একটি অনলাইন ভিত্তিক জুয়া হচ্ছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নিয়ন্ত্রিত ‘এন্ডিং জুয়া’। ওই জুয়ায় অংশ নিয়ে আজমিরীগঞ্জ সদরের অনেকেই নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত হয়েছেন। পরবর্তীতে তারা বসতভিটা পর্যন্ত বিক্রি করে কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে গেছেন। কয়েকদিন পূর্বে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নিজ মালিকাধীন দুটি বসতবাড়ি ও ভিটা বিক্রি করেছেন। অপর এক শিক্ষক তার নিজের বেতনে ঋণের টাকা পরিশোধ করছেন আর স্ত্রীর বেতনে পরিবারের ব্যয়ভার বহন করছেন। আরেক শিক্ষক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। বাজারের এক ফার্মেসি ব্যবসায়ী নিজের বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে স্ত্রী-সন্তানাদি নিয়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। একইভাবে হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার আশায় অনেক জুয়াড়ি বাড়িঘর, জমিজমা বিক্রি করে নিঃস্ব হয়েছেন।
বর্তমানে আজমিরীগঞ্জ সদরে অনলাইন ভিত্তিক ওই জুয়া খেলার সাব-এজেন্ট রয়েছেন ১২-১৫ জন। এ ছাড়া তাদের অধীনে অর্থ সংগ্রহকারীও রয়েছেন। সপ্তাহের রোববার ব্যতীত ৬ দিনই জুয়া খেলা হয়। খেলায় ১০ টাকায় ৭০০ টাকা হিসেবে প্রদান করা হয়। প্রতিদিন দুইবার মোবাইলের মাধ্যমে ফলাফল জানিয়ে দেয়া হয়। সাব-এজেন্টদের মাধ্যমে অর্জিত টাকা সীমান্ত এলাকার এজেন্টদের নিকট চলে যায়। পরবর্তীতে ওই টাকা চলে যায় প্রতিবেশী দেশ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে।
তাই সচেতন লোকজনের মতে, দেশ এবং সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে অনলাইন জুয়ার সফটওয়্যারগুলো বন্ধ করা জরুরি। পাশাপাশি কঠোর নজরাদিতে রাখতে হবে যাতে কোনো আইপি কিনে কিংবা নাম পরিবর্তন করে নতুনভাবে কেউ আবার কার্যক্রম চালাতে না পারে।
মাঝে মাঝে অনলাইন জুয়াড়িদের আটক করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের অর্থদÐ বা কারাদÐ অথবা উভয়দÐে দÐিত করেন। অনলাইন ভিত্তিক জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের তৎপরতা আরও জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জৈন্তাবার্তা / রহমান
